Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুনসান সড়কে ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা ছাত্রীর উপরে

সকালটা শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। স্নান সেরে, খাওয়া-দাওয়া করে রোজকার মতো কলেজের দিকে রওনা দিয়েছিল মেয়েটি। সুর কাটল তখনই। বাড়ি থেকে কলেজ হাঁটাপথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

সকালটা শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। স্নান সেরে, খাওয়া-দাওয়া করে রোজকার মতো কলেজের দিকে রওনা দিয়েছিল মেয়েটি। সুর কাটল তখনই।

বাড়ি থেকে কলেজ হাঁটাপথ। মোটর বাইকে দুই যুবক যে তাঁকে লক্ষ্য করছে, সেটা বুঝে হাঁটার গতি কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন ছাত্রীটি। বাইকটি তাঁকে ছাড়িয়ে পিছনে গিয়ে আবার এগিয়ে আসে। তখনই তাদের হাতে ঝলসে ওঠে অস্ত্র। যা দিয়ে পিছন দিক থেকে আঘাত করা হয় মেয়েটির পেটে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল, হাবরার প্রফুল্লনগর বাইপাস। মেয়েটির চিকিৎসা করানো হয় হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরে বাড়িও ফিরে গিয়েছেন তিনি। হাবরা থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও নির্দিষ্ট কারও নাম জানাতে পারেননি তিনি। মোটর বাইকের নম্বরও দেখেননি। তবে জানিয়েছেন, দুই বাইক আরোহীই হেলমেট পরে ছিল। বাইকের রঙ ছিল ধূসর।

ছাত্রীটির উপরে হামলার ঘটনা জেনেছি। পুলিশকে বলেছি, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে। পুলিশি টহল আরও বাড়াতে বলা হয়েছে।

নীলিমেশ দাস (পুরপ্রধান, হাবরা)

আর মেয়েটির দেওয়া এই তথ্যই আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে পরিবারটির। শুক্রবার একই কায়দায় তাঁর বাবার উপরে একই রাস্তায় হামলা চালানো হয়েছে। আঘাত ততটা গুরুতর ছিল না। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের কতরেননি তিনি। কিন্তু সে বারও দুই বাইক আরোহীর মাথায় ছিল হেলমেট। বাইকের রঙ, ধূসর। এই তথ্যই আপাতত বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারটির কাছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘ছাত্রীর উপরে হামলার ঘটনার কারণ পরিষ্কার নয়। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী হাবরা শ্রীচৈতন্য মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সে সময়ে রাস্তায় খুব বেশি লোকজন ছিল না। দু’নম্বর রেলগেটের কাছে বাইপাস রাস্তার কাছে আসতেই দেখি একটি মোটরবাইকে দুই যুবক আমাকে লক্ষ্য করছে। দু’জনেরই মাথায় হেলমেট ছিল বলে চি‌নতে পারিনি। ওরা ধারাল কোনও অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করে। আমি রক্তাত্ব অবস্থায় মাটিতে পড়ে গিয়ে চিৎকার করতে থাকি। দূর থেকে দেখি, ওরা যশোর রোড ধরে অশোকনগরের দিকে চলে গেল।’’

কারা তার উপরে হামলা চালাতে পারে? কেনই বা কেউ হামলা করবে তাঁর উপরে? এ সব প্রশ্নের উত্তর ঠাহর করতে পারছেন না তরুণী নিজেও। তবে বললেন, ‘‘এরপরে তো আমার কলেজ যেতেই ভয় করবে!’’

মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘একই কায়দায় হামলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমার আঘাত তত গুরুতর ছিল না বলে ততটা গুরুত্ব দিইনি। তবে এখন তো অন্য ভাবে ভাবতে হচ্ছে। কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’ কী কারণে তাঁর ও মেয়ের উপরে হামলা হল, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তরুণীর বাবাও।

এ দিকে, কয়েক দিনের ব্যবধানে এমন ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বছর কয়েক আগে ওই প্রফুল্লনগর বাইপাস রাস্তার পাশেই একটি রক্তদান শিবিরে দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি মেরে খুন করেছিলেন কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরীকে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন টিএমসিপি কর্মী রঞ্জিত রায় ওরফে নিগ্রোও।

বাইপাস এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, এমনিতে হাবরা শহরের যাটজট এড়াতে গাড়ি চালকেরা বাইপাস ব্যবহার করেন। কিন্তু রাস্তার সন্ধ্যার পরে রাস্তা তুলনায় ফাঁকা থাকে। তবে পুলিশি টহল দেখা যায় বলেও জানালেন অনেকে। হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘ছাত্রীর উপরে হামলার ঘটনা জেনেছি। পুলিশকে বলেছি, দুষ্কৃতীর দ্রুত গ্রেফতার করতে। পুলিশি টহল আরও বাড়াতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE