Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ধস্তাধস্তি পুলিশের সঙ্গে

হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ও ব্যবসায়ীরা শুক্রবার নামখানা বিডিও অফিসে স্মারকলিপি দিতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ দিন প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কংগ্রেস, এসইউসি-র সাধারণ কর্মীরাও সামিল হয়েছিলেন। বিডিও অফিসের সামনে আন্দোলনকারীদের আটকালে প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়।

প্রতিবাদ মিছিলে সামিল কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: দিলীপ নস্কর।

প্রতিবাদ মিছিলে সামিল কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নামখানা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ও ব্যবসায়ীরা শুক্রবার নামখানা বিডিও অফিসে স্মারকলিপি দিতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ দিন প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কংগ্রেস, এসইউসি-র সাধারণ কর্মীরাও সামিল হয়েছিলেন। বিডিও অফিসের সামনে আন্দোলনকারীদের আটকালে প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। কান্তিবাবুকে পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে এরপর আর না এগিয়ে সেখানেই রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। এর ফলে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বকখালি-নামখানা রাস্তায় সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। যার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

এ দিনের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বিডিও তাপস মণ্ডল দফতরে কেন ছিলেন না, তার কোনও সদুত্তর প্রশাসনের কর্তারা দিতে পারেননি। বিডিওর মোবাইলে দিনভর যোগাযোগ করা যায়নি। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, “আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিডিওকে থাকার জন্য বলা হয়েছিল। তিনি না থাকায় আন্দোলনকারীদের সে কথা জানানো হয়। কিন্তু তা-ও তাঁরা জোর করে ঢুকতে চাইছিলেন।”

নামখানা-নারায়ণপুরের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও বাস্তুহারা কমিটির সদস্যেরা শুক্রবার বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিডিও অফিসের কাছে পৌঁছন। সেখানেই তাঁদের আর এগোতে নিষেধ করে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা বারবার বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়ার দাবি জানালে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয় বলে অভিযোগ। বিডিও বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কেউই তখন অফিসে ছিলেন না। ঘণ্টা দুয়েক পর আন্দোলনকারীরা ফের বিডিও অফিসে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। কান্তিবাবুকে অফিসে ঢোকার মুখে আটকে দেওয়া হয়। এর ফলে স্মারকলিপি না দিয়ে আন্দোলনকারীরা ফিরে আসেন।

কান্তিবাবু বলেন, “আমরা সরকারে থাকার সময় সুন্দরবন এলাকায় ৩৩টি সেতু বানিয়েছি। তার ফলে যে সমস্ত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ ও পুনবার্সনের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমান সরকার ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে ব্যবসায়ীদের দোকান, বাড়ি-ঘর ভেঙে দিচ্ছে। সরকার এই পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্তা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ১০ সেপ্টেম্বর কাকদ্বীপ মহকুমা শাসকের অফিসে ঘেরাও করে বিক্ষোভ-আন্দোলন করব।” এ দিনের আন্দোলনে ছিলেন রাজ্যের পিডিএস-এর সাধারণ সম্পাদিকা অনুরাধা দেব। তিনি বলেন, “সামনেই বড় উৎসব দুর্গাপুজো। তার ঠিক আগেই যে ভাবে পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ হতে হল, তা নিন্দনীয়। অবিলম্বে ওই পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক সরকার।” একই দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস এবং এসইউসি।

প্রসঙ্গত নামখানা এবং নারায়ণপুরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর ওপর সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। প্রায় দেড়শো মিটার চওড়া এই নদীর উপর সেতু করতে নদীর উভয় দিকে প্রায় সাড়ে ন’শো দোকান ও বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর বিরুদ্ধে এ দিন বিডিও অফিস অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষতিগ্রস্তরা। তা নিয়ে যাতে গণ্ডগোল না হয়, সে জন্য বিডিও অফিসের সামনে ৪-৫টি থানার পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফ মোতায়েন ছিল।

এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্তকুমার মালি বলেন, “ওঁদের স্মারকলিপি দেওয়ার সময় ছিল দেড়টা থেকে দু’টোর মধ্যে। কিন্তু প্রায় দু’টো বেজে গেলেও ওঁরা পৌঁছননি।”

তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নামখানার দিকে মার্কেটিং কমপ্লেক্সের জন্য জমি পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deputation namkhana southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE