Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অধরা ৯ কিশোর, আটক ৩

দড়ি তৈরি করে হোম থেকে চম্পট

পুলিশ ও হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১২ জনের মধ্যে কেউ পকেটমারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, কেউ ছিনতাই। কেউ বা প্রকাশ্যে নেশা করতে গিয়ে। যে ঘরে তারা থাকত, সেখানে আরও কয়েক জন কিশোর রয়েছে।

এখান দিয়ে পালিয়েছে কিশোরের দল। নিজস্ব চিত্র

এখান দিয়ে পালিয়েছে কিশোরের দল। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

থ হয়ে গিয়েছেন পুলিশকর্তারা!

প্রায় ৫০ ফুট উঁচু হোমের তিনতলা থেকে ঝোলানো হয়েছে বেডকভার, গামছা ও ছেঁড়া কম্বল দিয়ে বানানো মোটা ‘দড়ি’। সেই ‘দড়ি’র একপ্রান্ত বাঁধা তিনতলার একটি ঘরের লোহার খাটের সঙ্গে। ‘দড়ি’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঘর লাগোয়া শৌচাগারের জানলা দিয়ে। বাঁকানো হয়েছে সেই জানলার লোহার শিক।

এ ভাবেই রাস্তা বানিয়ে ‘দড়ি’কে হাতিয়ার করে রবিবার রাতে মন্দিরবাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোম থেকে পালায় নানা ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ জন কিশোর। যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে তিন জনকে সোমবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পুলিশ ধরে। কিন্তু রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও ৯ জনের খোঁজ মেলেনি।

পুলিশ ও হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১২ জনের মধ্যে কেউ পকেটমারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, কেউ ছিনতাই। কেউ বা প্রকাশ্যে নেশা করতে গিয়ে। যে ঘরে তারা থাকত, সেখানে আরও কয়েক জন কিশোর রয়েছে। তবে, তারা ওই ১২ জনের রাস্তায় হাঁটেনি।

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ওই হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। সেখানে মাত্র দু’জন অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। হোম কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন, তাঁরা ওই ১২ জনের পালানোর কথা জানতে পারেন অন্য আবাসিক কিশোরদের থেকে। হোমের সুপার বাবুসোনা পাইক বলেন, ‘‘রবিবার রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল। কোনও ভাবে নিরাপত্তা রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ওরা পালিয়েছে।’’ কিন্তু তিন তলা থেকে দড়ি বেয়ে নেমে এক এক করে ১২টি কিশোর কী ভাবে নিরাপত্তা রক্ষীদের নজর এড়িয়ে পালাল, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। ওই রক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হোম কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ।

সোমবার ওই হোমে তদন্তে যায় পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের লোকজন। যে কায়দায় ১২টি কিশোর পালায়, তা দেখে তাজ্জব হয়ে যান সকলে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ছেলেগুলো দুঃসাহসিক কাজ করেছে। বড় অপরাধীরাও এ ভাবে পালানোর সাহস চট করে পাবে না। মনে হয় ওরা অনেক দিন ধরে পরিকল্পনা করেছে।’’ একই কথা বলেন চাইল্ড লাইনের লোকজনও। তাঁরা মনে করছেন, ঘরবন্দি থাকতে থাকতে হয়তো ওই ১২ জন অস্থির হয়ে উঠেছিল।

মন্দিরবাজারের পাওয়ার হাউস মোড়ের কাছে ওই হোমটি চলছে বছর দশেক। মূলত ১৮ বছরের কম বয়সী অভিযুক্তদেরই আদালতের নির্দেশমতো সেখানে রাখা হয়। এ ছাড়াও থাকে কিছু ভবঘুরে কিশোর-কিশোরী। সব মিলিয়ে বর্তমানে সেখানে আবাসিকের সংখ্যা প্রায় ৮০। তাদের জন্য আলাদা দু’টি তিন তলা ভবন রয়েছে। যে ছেলেগুলি রবিবার পালায়, তারা ছিল একটি ভবনের তিনতলার ২ নম্বর ঘরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE