Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমিককে খুনে গ্রেফতার ২ মহিলা

দুই প্রেমিকার চাপ সামলাতে পারলেন না প্রসেনজিৎ। পুকুর থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায়, যুবকের গলার নলি কাটা। হাত-পা বাঁধা। খুনের বীভৎসতায় পুলিশ অনুমান করেছিল, পুরনো কোনও আক্রোশ থেকেই খুন। তখনও অবশ্য নিহতের পরিচয় অজানা।

গ্রেফতার: পুলিশের জালে দুই মহিলা। নিজস্ব চিত্র।

গ্রেফতার: পুলিশের জালে দুই মহিলা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

দুই প্রেমিকার চাপ সামলাতে পারলেন না প্রসেনজিৎ।

পুকুর থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায়, যুবকের গলার নলি কাটা। হাত-পা বাঁধা। খুনের বীভৎসতায় পুলিশ অনুমান করেছিল, পুরনো কোনও আক্রোশ থেকেই খুন। তখনও অবশ্য নিহতের পরিচয় অজানা।

খোঁজ করতে করতে যুবকের পরিচয় জানা যায়। চার দিনের দুই মহিলাকে গ্রেফতার করে খুনের কিনারাও করা হল বলেও দাবি করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, দুই মহিলার সঙ্গেই প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল প্রসেনজিৎ মাইতি নামে বছর চল্লিশের অবিবাহিত ওই যুবকের। দুই মহিলার কাছে ব্যাপারটা যত দিন গোপন ছিল, দিব্যি প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু প্রেমিকারা ব্যাপারটা ধরে ফেলায় তাঁরাই যুবককে খুন করেন। জেরায় দুই মহিলা সে কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি পুলিশের।

সোমবার পাথরপ্রতিমার ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রমোহনপুরে পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রসেনজিতের দেহ। দক্ষিণ শিবগঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবক ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে ফিরতেন পাথরপ্রতিমায়।

ঘটনার তদন্তভার নেন এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার, পাথরপ্রতিমার ওসি সোমনাথ দে। তদন্তকারীদের দাবি, ক্ষেত্রমোহনপুরের আদি বাসিন্দা, বছর পঁয়ত্রিশের রেবতী মণ্ডলের সঙ্গে পুরনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রসেনজিতের। রেবতীর স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তাঁর দু’টি সন্তান। রেবতী গড়িয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে আয়ার কাজ করেন।

কিছু দিন আগে অচিন্ত্যনগরের স্বামী পরিত্যক্তা বছর একুশের তরুণী প্রতিমা মণ্ডলের সঙ্গেও প্রসেনজিতের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তাঁর আবার দু’বছরের একটি মেয়ে আছে। রেবতীর সঙ্গে প্রতিমার পরিচয়ও করে দিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। বলেছিলেন, প্রতিমা তাঁর নিজের বোন।

তিনজনের মেলামেশা ছিল। পুলিশের অনুমান, সেই ঘনিষ্ঠতাই কাল হল। দুই মহিলাই জানতে পারেন, দু’জনের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক রেখে চলছেন প্রসেনজিৎ। বিষয় জানাজানি হওয়ায় অবশ্য দমে যাননি ওই যুবক। পুলিশের দাবি, জেরায় প্রতিমা-রেবতীরা জানিয়েছেন, দুই মহিলার সঙ্গে একই সঙ্গে সহবাসের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। এতে হিতে বিপরীত হয়। দু’জনেই চটেন ওই যুবকের উপরে। প্রতিমাও বুঝতে পারেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করে আখেরে প্রতারিতই করছেন প্রেমিক।

পুলিশের দাবি, প্রসেনজিৎকে খুনের ছক কষেন দুই মহিলা। ক্ষেত্রমোহনপুরে রেবতীর বাড়িতে গত শনিবার সন্ধ্যায় ডেকে আনা হয় প্রসেনজিৎকে। প্রচুর মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে ফেলা হয়। তারপরে হাত-পা বাঁধা হয়। শাবল-দা দিয়ে আঘাত করে, ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে প্রসেনজিৎকে খুন করেন দুই মহিলা। রাত ২টো নাগাদ গ্রামের পাশের একটি পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয় দেহ। তারপরে দু’জনেই গড়িয়া চলে যান। সেখান থেকে ফেরেন দোলের পরে।

সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে বড় সাফল্য। দুই মহিলা আমাদের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেছেন।’’ খুনের ঘটনায় দুই মহিলা অন্য কারও সাহায্য নিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আজ, শনিবার দু’জনকে কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE