শ্রমজীবী হাসপাতালে সুরজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।
সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরার পথে দু’দিন আগে আচমকাই টর্চের বাড়ি খেয়ে ছিটকে পড়েছিলেন কুলতলির পূর্ব গু়ড়গুড়িয়া গ্রামের যুবক সুরজিৎ মাইতি। হামলাকারীরা তাঁর মুখে গামছা বেঁধে পাঁজাকোলা করে মাকড়ি নদীর চরে তুলে নিয়ে গিয়ে ফের মারধর করে। তার পরে সেই নদীর ধারে ফেলেই চলে যায়। ম্যানগ্রোভ নিধনের প্রতিবাদ করায় এ ভাবেই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বর্তমানে শ্রীরামপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক।
আহত সুরজিৎ ‘দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরাম’-এর শাখা কুলতলি ব্লক মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক। আগে সিপিএম কর্মী ছিলেন। এখন তৃণমূলে। তিনি রাজনৈতিক দলের কর্মী হওয়ায় ঘটনার রাজনীতির রংও লেগেছে। তাঁর পরিবারের লোকজন মইপীঠ কোস্টাল থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, এসইউসি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালায়। এসইউসি নেতা তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ হালদার অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের দলের কেউ কোন ভাবেও ওই ঘটনায় জড়িত নয়।’’
পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তদের কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আহত সুরজিতের দাবি, ‘‘আমাকে যতই মারুক, ম্যানগ্রোভ কাটলে প্রতিবাদ করবই। গাছ মরলে সবাই যে মরব!’’
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব গুড়গুড়িয়া গ্রামের মনসাতলা এলাকায় মাকড়ি নদীর তীরে প্রায় ২০ বিঘে এলাকা জুড়ে অবাধে ম্যানগ্রোভ নিধন চলছে কয়েক মাস ধরে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মাছ চাষের জন্য ভেড়ি তৈরির উদ্দেশ্যেই ম্যানগ্রোভ কেটে সাফ করা হচ্ছে। এলাকারই কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশ চুপ করে বসে না থেকে প্রতিবাদে নামেন। বিভিন্ন সরকারি দফতরে এ নিয়ে অভিযোগ জানান তাঁরা। সুরজিৎ ওই প্রতিবাদীদের অন্যতম। গ্রামবাসীরা রুখে দাঁড়ানোয় সংশ্লিষ্ট দফতর নড়েচড়ে বসে। গাছ কাটা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, কিছু দিন চুপচাপ থাকার পরে ফের চোরাগোপ্তা গাছ কাটা শুরু করে দুষ্কৃতীরা। বিষয়টি নিয়ে বন দফতর থেকে শুরু করে থানা, সেচ বিভাগ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরেও জানান সুরজিৎ।
সুরজিতের দাবি, তাঁকে সক্রিয় হতে দেখেই দুষ্কৃতীদের রাগ গিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। দিন পনেরো আগে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সুরজিতের মা সরস্বতীদেবী এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে আগেই অভিযোগ জানান। গত বুধবার সাড়ে ন’টা নাগাদ কিছু লোক সুরজিতের পথ আগলে দাঁড়ায়। তিনি তখন স্থানীয় পাঁচ রাস্তার মোড় দিয়ে সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। তার পরেই তাঁর উপরে হামলা হয়।
সুরজিৎ বলেন, ‘‘মাটিতে ফেলে মারতে মারতে ওরা বলছিল, ভেড়ি বানিয়ে মাছ চাষ করবে বলে গাছ কাটছে। তাতে আমার জ্বালা ধরছে কেন! প্রচণ্ড মারে এলিয়ে পড়ি। মরে গিয়েছি ভেবে কিছুটা দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়।’’
হামলাকারীরা চলে গেলে কোনও রকমে একটি বাড়ির কাছে গিয়ে জ্ঞান হারান সুরজিৎ। স্থানীয় লোকেরা তাঁকে উদ্ধার করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। জখম অবস্থায় সুরজিৎকে প্রথমে জামতলায় জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সুরজিতের ডান হাতে ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, কোমরের উপরে এবং হাতে ব্যথা রয়েছে।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু। ম্যাটাডোরের ধাক্কায় মৃত্যু হল যুবকের। শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বাদুড়িয়ার দক্ষিণ বেনা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম আবদুল লাহেন (২৮)। আবদুল-সহ চার বন্ধু হেঁটে স্বরূপনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময়ে একটি ম্যাটাডোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy