Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মতুয়াদের টানার চেষ্টা বিজেপির

মতুয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯ সালের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ধর্মীয় পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন।

 সভা-মঞ্চে: বক্তৃতা করছেন দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

সভা-মঞ্চে: বক্তৃতা করছেন দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share: Save:

তৃণমূলের সঙ্গে মতুয়াদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে মুখ খুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পদ্মশিবিরের কাছে টানারও চেষ্টা চালালেন।

বৃহস্পতিবার হাবরার কুমড়ো এলাকায় দলের তফসিলি মোর্চার সম্মেলনে এসে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি তফসিলি সমাজের জন্য কী দিয়েছে? মতুয়াদের কী দিয়েছে?’’

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলেরও সমালোচনার সুযোগ ছাড়েননি বিজেপি নেতা। বলেছেন, ‘‘হরিচাঁদ গুরুচাঁদের (মতুয়াদের ধর্মগুরু) কথা ভুলে মতুয়ারা মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী বালুদার (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম) তাঁবেদারি করছেন। এই পাপের ফল তাঁদের ভুগতে হবে।’’

মতুয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯ সালের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ধর্মীয় পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে মমতার। মতুয়াদের ধর্মমেলার জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেন।

পরবর্তী সময়ে বড়মার ছোটছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে ২০১১ সালে ভোটের টিকিট দিয়ে জিতিয়ে এনে মন্ত্রিত্ব দেন মমতা। মঞ্জুলের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির ফলে মন্ত্রীত্ব যায় মঞ্জুলের। বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। ছেলে সুব্রত বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটেও লড়েন।

তবে মঞ্জুলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও মতুয়া বাড়ির সঙ্গে সম্পর্কে কখনও ছেদ পড়েনি ঘাসফুল শিবিরের। বড়মার বড়ছেলে, মঞ্জুলের দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে টিকিট দেন মমতা। কপিলবাবুর মৃত্যুর পরেও মতুয়াবাড়ির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার শিকড়টি কখনও ছিন্ন হতে দেননি তৃণমূল নেত্রী। কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন। পরাজিত হন মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত।

মতুয়াদের সঙ্গে মমতার এ হেন ঘনিষ্ঠতা বামেরা কখনও ভাল চোখে দেখেনি। মতুয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা তারাও কম করেনি। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হরিপদ বিশ্বাস ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। বাম নেতারা একাধিক বার গিয়েছেন বড়মার আশীর্বাদ নিতে। কিন্তু তৃণমূলের কাছে বরাবরই এ ব্যাপারে কয়েক গোল খেয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছে বিমানবাবুদের। বড়মার ‘আশীর্বাদ’ বরাবর নিজের কাছেই টেনে রাখতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেটাই এখন হয়েছে বিজেপির গাত্রোদাহের কারণ হয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য।

মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত তফসিলি সম্প্রদায়ের। উদ্বাস্তুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব তাঁরা। মতুয়াদের হুঁশিয়ার করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘ফের যদি উদ্বাস্তু হতে চান, তা হলে কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূলকে সমর্থন করুন। বিজেপিকে ভোট দিতে হবে না।’’

দিলীপবাবুর এই অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘দিলীপবাবু রাজনৈতিক ভাবে অসুস্থ। অমিত শাহের উচিত, ওঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো।’’ খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘মতুয়াদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কুড়ি বছরের। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন করেছেন।’’

সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘২০০৩ সালে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে কালা আইন করেছিল কেন্দ্র। যার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। দিলীপবাবুর যদি মতুয়াদের জন্য কিছু করার থাকে, তা হলে তিনি কেন কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে আইন সংশোধন করছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Matua বিজেপি মতুয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE