Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুরভোট ২০১৫: রাজপুর-সোনারপুর

সহজ অঙ্ক কি জটিল হচ্ছে

লোকসভার নির্বাচনের নিরিখে সব ওয়ার্ডেই এগিয়ে শাসক দল। সেক্ষেত্রে শাসক দলের ভোট ম্যানেজাররা যে ফুরফুরে মেজাজে থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। শাসক শিবিরে অস্বস্তির কালো মেঘ। আসলে রাজপুর-সোনারপুরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের ভোট ম্যানেজারদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের নিজেদের মধ্যেই সব সময় চলছে গুজগুজ-ফিসফাস। শাসক দলের অন্দরে তৈরি হয়েছে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতি।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

লোকসভার নির্বাচনের নিরিখে সব ওয়ার্ডেই এগিয়ে শাসক দল। সেক্ষেত্রে শাসক দলের ভোট ম্যানেজাররা যে ফুরফুরে মেজাজে থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। শাসক শিবিরে অস্বস্তির কালো মেঘ। আসলে রাজপুর-সোনারপুরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের ভোট ম্যানেজারদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের নিজেদের মধ্যেই সব সময় চলছে গুজগুজ-ফিসফাস। শাসক দলের অন্দরে তৈরি হয়েছে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতি।

কিন্তু ভোটের পালে হওয়া থাকা সত্ত্বেও এই অস্বস্তি কেন?

রাজপুর-সোনারপুরে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় গোঁজরাই হয়ে উঠেছেন বিড়ম্বনার কারণ। প্রচার অভিযান যত এগোচ্ছে, ততই গোঁজরাও হাত-পা ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এমন একাধিক ওয়ার্ড রয়েছে, যেখানে মূল লড়াই তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে গোঁজের। তেমনই একটি ওয়ার্ড ৯। এখানে তৃণমূল প্রার্থী নমিতা দাস। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূলের ওয়ার্ড সম্পাদক জয় সেনগুপ্ত ও রাজ্য তৃণমূলের সদস্য হেমন্ত বসু। এই তিন প্রার্থীর জোরদার প্রচারে মজে রয়েছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ভোট কাটিকাটিতে কার ভাগ্যের শিকে ছেড়ে, সেই আশায় দিন গুনছেন বামফ্রন্ট ও বিজেপি প্রার্থী। গোঁজের সঙ্গে লড়াই জমে উঠেছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও। সেখানকার প্রার্থীর নামও নমিতা দাস। তাঁর বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছেন বিগত বোর্ডের স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুজিত মণ্ডল। ভোট কাটাকাটির
অঙ্কে ওই ওয়ার্ডেও আশাবাদী বিজেপি এবং সিপিএম।

তবে গোঁজের লড়াইয়ের পাশাপাশি সিপিএমের আসন ছিনিয়ে নিতেও লড়াইয়ে নেমেছেন শাসক দলের প্রার্থীরা। যেমন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিভাস মুখোপাধ্যায় ওরফে মনু। গতবার ওই ওয়ার্ড ছিল সিপিএমের দখলে। কাউন্সিলর সিপিএমের হওয়ায় রাজনীতির অঙ্কে পাইপ লাইনে পানীয়জলের বরাত জোটেনি ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। তৃণমূলের বোর্ড তাঁদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করেছিল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ওই পাইপ লাইনের জলকেই হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছেন তৃণমূল প্রার্থী বিভাস মুখোপাধ্যায়। ওয়ার্ডের প্রতি ঘরে পাইপ লাইনের জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট-প্রচার অভিযানে দিন-রাত এক করে দিচ্ছেন মনুবাবু। তৃণমূল প্রার্থীর এক ভোট ম্যানেজারের কথায়, আশা করি পানীয় জলেই মজবে ভোটার। ‘দাদা’ জিতবে।

জোটের ঘোটে যথেষ্ট বিরক্ত রাজপুর-সোনারপুর পুর-নির্বাচনের মোট ৩৫টি ওয়ার্ডের মূল ভোট ম্যানেজার বিগত বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তথা সোনারপুরের (উত্তর) বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম। সকালে কামালগাজির বাড়িতে বসে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘‘সহজ-সরল অঙ্কের নির্বাচনটাকে ঘোলা জলে পরিণত করা হল। গত পাঁচ বছরে কামালগাজি স্পোটর্স কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, পাড়ায় পাড়ায় ভেপার ল্যাম্প, খালপাড়ের সংস্কার, রাস্তাঘাটের এত উন্নয়ন হল। কিন্তু শুধু কয়েক জনের জন্য সব ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।’’

গত লোকসভার নিরিখে চারটি ওয়ার্ডে এগিয়ে সিপিএম। বিজেপি কেবল উঁকি মারতে পেরেছে কয়েকটি ওয়ার্ডের বুথে। আর কংগ্রেস রয়েছে শুধুই সাইন বোর্ডে। মাত্র চারটি আসনে এগিয়ে থাকলেও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বামফ্রন্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কমল গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু যথেষ্ট আশাবাদী। বোর্ড দখলের অঙ্ক কষে ফেলেছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এই বামফ্রন্ট প্রার্থী। কমলবাবুর কথায়, ‘‘এক দিকে তৃণমূল ও গোঁজের ভোট কাটাকাটি। আর এক দিকে তৃণমূল বোর্ডের লাগাম ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ভোট আসবে সিপিএমের দিকে। সে ক্ষেত্রে কমে যাবে তৃণমূলের ভোট। দু’টি অঙ্কেই লাভবান সিপিএম।’’ গোঁজের ভোট কাটাকাটিতে আশাবাদী বিজেপিও। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (পূর্ব) দেবতোষ আচার্য বলেন, ‘‘গোঁজের ভোট কাটাকাটিতে যদি কেউ লাভবান হয় তো আমরাই। সিপিএমকে নয়, মানুষ ভোট দেবে বিজেপিকে।’’ গোঁজের অঙ্ক ও নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের দোহাই দিয়ে আশাবাদী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস নেতারাও। তাঁদের দাবি, সাইনবোর্ড নয়, আসন বাড়বে। কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির সদস্য গোপাল গুহ বলেন, ‘‘গত নির্বাচনে আমরা তিনটি আসন পেয়েছিলাম। এ বার হবে পাঁচটি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE