Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হাবরার সোনাকেনিয়া

অভাবে ম্লান ইদের অনুষ্ঠান

সোমবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা। সর্বত্রই চলছে এক আলোচনা। বেশির ভাগ বাড়িতে ইদের জন্য নতুন পোশাক কেনা হয়নি। আনন্দ উৎসব থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন তাঁরা। সকালে বামিহাটি ইদগাহতে দলবেঁধে নামাজ পড়েছেন মাত্র।

উৎসবের দিনেও উধাও আনন্দ। নিজস্ব চিত্র

উৎসবের দিনেও উধাও আনন্দ। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৩:০৯
Share: Save:

ইদের দু’দিন আগে থেকে গ্রামের রাস্তায় বড় বড় তোরণ তৈরি হতো। সাজানো হতো ইদগাহ। আলোয় সেজে উঠত গোটা গ্রাম। নতুন পোশাক পরে গ্রামের সবাই সামিল হতেন এই খুশির ইদে।

কিন্তু এ বার আর জাঁকজমক করে ইদ উৎসব পালন করতে পারলেন না হাবরার সোনাকেনিয়া গ্রামের মানুষ। কারণ তাঁদের হাতে টাকা নেই। কৃষি সমবায় সমিতিতে টাকা রেখেছিলেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, সেই টাকা নিয়ে চম্পট দেয় ওই সমিতির ম্যানেজার মহম্মদ কুদ্দুস মোল্লা ও তার ছেলে আজহারউদ্দিন। থানায় অভিযোগ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সোমবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা। সর্বত্রই চলছে এক আলোচনা। বেশির ভাগ বাড়িতে ইদের জন্য নতুন পোশাক কেনা হয়নি। আনন্দ উৎসব থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন তাঁরা। সকালে বামিহাটি ইদগাহতে দলবেঁধে নামাজ পড়েছেন মাত্র। গ্রামের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম রুজুউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার গ্রামে ইদের আনন্দ বলতে কিছু নেই। মানুষ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে উৎসব পালন করা আর সম্ভব নয়।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভুক্ত। কোনও রকমে চাষবাস, দিনমজুরি, খেত মজুরি করে সংসার চালান। গ্রামের মানুষ তাঁদের জমানো টাকা রেখেছিলেন স্থানীয় ওই কৃষি সমবায় সমিতিতে। প্রতিবছরই গ্রামের মানুষ ইদের আগে ওই সমবায় সমিতি থেকে তাঁদের জমানো টাকা তুলে ইদ উৎসব পালন করেন। সে কারণে ইদের কিছুদিন আগে থেকেই গ্রামের মানুষ ওই সমবায় সমিতিতে টাকা তুলতে যান।

তাঁরা জানান, সকাল বিকেল গিয়েও মেলেনি টাকা। কর্তৃপক্ষ তাঁদের ঘোরাচ্ছিলেন। শেষে তাঁদের বলা হয়েছিল ১৯ জুন টাকা দেওয়া হবে। সেই মতো গ্রাহকেরা সমিতিতে যান। গিয়ে দেখেন সমিতির অফিসে তালা ঝোলানো। ম্যানেজার ও তার ছেলে আজহারউদ্দিন পলাতক। ২১ জুন হাবরা থানায় অভিযোগ করেন বাসিন্দারা।

গ্রামবাসীরা বলেন, ‘‘ইদে আনন্দ করা তো দূরের কথা। এখন দিন রাত থানায় গিয়ে টাকার খোঁজ নিতে হচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় সেলাই মিস্ত্রি জামশেদ মণ্ডল জানান, অনেক কষ্ট করে ওই সমবায় সমিতিতে টাকা রাখা হয়েছিল। সেই টাকা দিয়েই উৎসব পালন করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু হল না। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সিরাজুল মণ্ডল, রাকিবুল মোল্লার কথায়, ‘‘পুরনো পোশাক পরেই ইদ কাটাতে হল। এমনকী বাড়ির ছোটদের জন্যও কিছু কেনা হল না। চিটফান্ডে টাকা রাখেনি। টাকা ছিল সরকারি সমবায় সমিতিতে। তা সত্ত্বেও এই দিন দেখতে হল।’’ তবে এখন তাঁরা চান, প্রশাসন সেই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE