Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মগরাহাটের পরে চোলাই-কাণ্ড এ বার বারুইপুরে, অসুস্থ আরও ৪ জন

‘বিষমদে’ প্রাণ গেল ১১ জনের

ফের বিষমদে মৃত্যুর অভিযোগ। আবারও সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। গত কয়েক দিনে বারুইপুর থানার বেতবেড়িয়া এলাকায় বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ওই ভাটির মালিক-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সূত্রের খবর।

মৃতের পরিবার।

মৃতের পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

ফের বিষমদে মৃত্যুর অভিযোগ। আবারও সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।

গত কয়েক দিনে বারুইপুর থানার বেতবেড়িয়া এলাকায় বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ওই ভাটির মালিক-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সূত্রের খবর।

মঙ্গলবার সকালে ঘোলাবাজার এলাকায় পুলিন নস্কর (৪২), বিমল নস্কর (৪৮), সঞ্জীব নস্কর (৪২), মনোরঞ্জন গায়েন ওরফে ক্যাবলা (৩৮) বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যাবলাই ঘোলা বাজার এলাকায় মদের ভাটি চালাতেন।

২০১১ সালে মগরাহাটে বিষমদে মারা গিয়েছিলেন ১৭৪ জন। তারপরে সরকার প্রতি পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।

বারুইপুরের ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার ঘোলাবাজারে ক্যাবলা গায়েনের ভাটিতে চোলাই খেয়েছিলেন ওই চার জন। সেই রাতেই তাঁদের চোখ জ্বালা-সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁদের। মঙ্গলবার সকালে চার জনেরই মৃত্যু হয়। এর আগে রবিবার ওই ভাটিতেই চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আরও সাত জন। সোমবার তাঁদের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার এলাকার বাসিন্দারা ওই ভাটিতে ভাঙচুর চালান।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষমদের জেরে ওই এলাকায় কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার রাতেই খবর পাওয়া গিয়েছিল। তার পরে ক্যাবলার ভাটিতে তল্লাশি চালানো হয়। ওকে গ্রেফতারও করা হয়। গ্রেফতারের পরেই মনোরঞ্জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকালে মারা যায় সে।’’

পুলিশ জানায়, বিষমদ খেয়ে ওই এলাকায় এ পর্যন্ত মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আট জনের দেহ ইতিমধ্যেই সৎকার হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত না হওয়ায় সরকারি ভাবে বিষমদে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে কি না, বলা যাবে না। ওই সব মৃতের পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃতেরা সবাই মনোরঞ্জনের ভাটিতেই মদ খেয়েছিলেন।

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘চোলাইয়ের ভাটিতে মদ খেয়ে কলকাতা, বারুইপুর ও ক্যানিং হাসপাতালে আরও ৪ জন অসুস্থ হয়ে ভর্তি।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল ঘোলাবাজার এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। হাসপাতালে অসুস্থদের সঙ্গেও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা কথা বলেছেন।

বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার বিষ্ণুপুর থানা এলাকার পৈলান থেকে চোলাই আসত মনোরঞ্জনের ভাটিতে। তার পরে ওই চোলাই মদের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে তা বিক্রি করা হত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ভাটির বিষয়ে পুলিশ ও আবগারি দফতরের কাছে খবরও ছিল। পুলিশের তরফে এক বার ওই ভাটি ভাঙা হয়। সম্প্রতি ফের ভাটি শুরু করেন মনোরঞ্জন।

জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিন জনের দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় মদ খেয়ে কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের মেডিক্যাল টিম বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’

এ দিকে, বিষমদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিষমদ খেয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দেহ ময়না-তদন্ত না করেই পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার আবগারি দফতর থেকে আরও বেশি রাজস্ব পাওয়ার জন্য মানুষের নৈতিকতাকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।’’ এ রাজ্যে মদ কেনা-বেচায় সরকারের কি কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের জবাব, ‘‘ওঁরা কী নিয়ন্ত্রণ করবেন? বিভিন্ন সময়ে শাসক দলের নানা অনুষ্ঠানের যে সব ভিডিও ক্লিপিং প্রকাশ্যে আসে, তাতে তো মদমত্ততার বহর দেখাই যায়! বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দিলেই তো সব মিটে যায় না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE