আলোচনা: পুলিশকে মহিলারা জানাচ্ছেন অসুবিধার কথা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
ছেলের শখ মেটাতে টাকা জমিয়ে মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন মা। কিন্তু শখের সেই মোবাইলই বেচে দিলেন বাবা। কারণ, নিজের নেশা করার টাকা চাই।
অন্যের বাড়ি কাজ করে পছন্দের দামী শাড়ি কিনেছিলেন এক বধূ। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য স্ত্রীর সেই শা়ড়ি বেচে দেন স্বামী।
এরকম একাধিক নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে বাগদা থানার পারমাদন এলাকায়। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ ডুবে রয়েছেন চোলাই, হেরোইন এবং গাঁজার নেশায়। স্কুল পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ—তালিকা থেকে বাদ নেই কেউ। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে প্রবণতা। এর ফলে পারমাদন অভয়ারণ্যে পর্যটকদের আনাগোনাও কমছে। তবে সম্প্রতি এর থেকে বেরিয়ে আসতে একজোট হতে শুরু করেছেন ওই এলাকার মহিলা এবং পুরুষদের একাংশ। এগিয়ে এসেছে পুলিশও। শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয় আদিবাসী পাড়ায় হল মাদক বিরোধী সচেতনতা শিবির। উপস্থিত ছিলেন কয়েকশো বাসিন্দা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিলেন বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় ও বাগদা থানার ওসি অসিত দলুই প্রমুখ।
শিবিরটি শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকল না, সেখানেই কয়েকজন মাদক বিক্রেতা দাবি করলেন, শনিবারের পর থেকে তাঁরা মাদক বিক্রি করবেন না। তপন সর্দার নামে এক মাদক বিক্রেতা জানালেন, ‘‘নাটাবেড়িয়া এলাকা থেকে চোলাই নিয়ে এসে গ্রামে বিক্রি করতাম। কিন্তু এর পর আর করবো না। কারণ এতে গ্রামের ক্ষতি হচ্ছে। এ বার থেকে চাষবাস করে খাবো।’’
ওই শিবিরেই উঠে এল মোবাইল, শাড়ি বিক্রি-সহ মাদকাসক্তদের নানা কীর্তির কথা। কয়েকজন মহিলা অভিযোগ করলেন, স্বামীরা নেশা করে এসে তাঁদের রোজ মারধর করেন। এক বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, তাঁর ছেলে মাদকের নেশায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর জামতলা এলাকা থেকে কয়েকজন হেরোইন নিয়ে পারমাদন এলাকায় আসে। এক একটি হেরোইনের পুরিয়ার দাম প্রায় ১০০ টাকা। প্রথমে ওই পুরিয়া বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তার পর নেশা হতে শুরু করলে ক্রেতারা টাকা দিয়েই হেরোইন কেনেন। শুধু হেরোইন নয়, বাইরে থেকে চোলাই এবং গাঁজারও আমদানি হয় পারমাদন এলাকায়। নেশার টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েন চুরি চক্রের সঙ্গে।
স্থানীয় সিন্দ্রানী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনন্দ অধিকারী বলেন, ‘‘মহিলারা নেশামুক্ত সমাজ তৈরির জন্য এগিয়ে আসছেন। আমরাও তাঁদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’ এসডিপিও অনিলবাবুর আশ্বাস, ‘‘শনিবারের পর যদি ওই এলাকায় কেউ মাদক বিক্রি করেন বা মাদক সেবন করেন তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy