Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইছামতী নদী সংস্কারের আর্জি কেন্দ্রে

খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ায় মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। কিন্তু ওই এলাকায় এখন মাথাভাঙা থেকে নদী সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথে চরা পড়েছে। ব্রিটিশ আমলে ওই এলাকায় একটি রেলব্রিজ তৈরি হয়েছিল।

গতিরুদ্ধ: এই হাল ইছামতীর বেশির ভাগ অংশেই। ফাইল চিত্র

গতিরুদ্ধ: এই হাল ইছামতীর বেশির ভাগ অংশেই। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ১৪:২৫
Share: Save:

ইছামতী নদীর স্বাভাবিক স্রোত ফিরিয়ে আনতে এ বার কেন্দ্রের দ্বারস্থ হল বনগাঁ পুরসভা।

সম্প্রতি পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ইছামতীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করে নদী বাঁচানোর আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ইছামতীকে বাঁচাতে হলে দ্রুত বৈজ্ঞানিক ভাবে নদীর সম্পূর্ণ সমীক্ষা করে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে ওই আর্জিই জানানো হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক থেকে ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে পুরপ্রধানকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, পুরপ্রধানের দাবি দ্রুত খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার।

ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটিও সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে উমা ভারতীর হাতে দাবিপত্র তুলে দিয়ে এসেছে। কমিটির সদস্য সুভাষ চট্টোপা‌ধ্যায় বলেন, ‘‘আশা করছি, কেন্দ্র এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।’’ নদীর উৎসমুখ সংস্কারের দাবিতে ২ জুলাই মাজদিয়ায় নাগরিক কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ায় মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। কিন্তু ওই এলাকায় এখন মাথাভাঙা থেকে নদী সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথে চরা পড়েছে। ব্রিটিশ আমলে ওই এলাকায় একটি রেলব্রিজ তৈরি হয়েছিল। ১৯১০ সাল নাগাদ সেটির সংস্কার হয়। সে সময়ে যে সব বড় বোল্ডার ফেলা হয়েছিল, তা আর তোলা হয়নি। তা ছাড়া, জলের চাপ সামলাতে সে সময়ে দু’টি গার্ডওয়াল দেওয়া হয়েছিল। এরফলে নদীতে ধীরে ধীরে পলি জমতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে ওই রেলব্রিজের বিষয়টিও জানানো হয়েছে। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘যেহেতু রেলব্রিজের ব্যাপার আছে, যৌথ নদীসীমান্ত আছে, সে সব কারণেই কেন্দ্রের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’’

ইছামতী বনগাঁ শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ পর্যন্ত গিয়েছে। নদীপথে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সীমান্ত। নদী পাড়ের বহু গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভার এলাকার জলনিকাশির অন্যতম ভরসা ওই নদী। কিন্তু নদী মজে যাওয়ায় তার জল ধারণের ক্ষমতা কমে গিয়েছে। ফলে প্রতি বছরই মানুষ বন্যার কবলে পড়েন। একটা সময় ছিল, জলপথে মানুষ যাতায়াত করতেন ইছামতী দিয়ে। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। কচুরিপানা আর পলি জমে জমে নদীর হতশ্রী দশা।

অতীতে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে ওই নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পলি তুলে সংস্কারের কাজ হয়েছে। কালাঞ্চি, বর্ণবেড়িয়া, বেড়ি গোপালপুর, চারঘাট, ও বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় নদীর পলি তোলা হলেও সুফল মেলেনি। নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ, ওই নদী সংস্কারের পরেও ইছামতীর স্বাভাবিক স্রোত ফেরেনি। সকলেরই বক্তব্য, উৎসমুখ সংস্কার ছাড়া নদী পুরনো অবস্থায় ফিরবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ichamati River ইছামতী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE