Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বহিরাগত খুঁজতে বেরিয়ে খালি হাতে ফিরল পুলিশ

গাদা গাদা পুলিশ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিরা। পাত্রপক্ষ, কন্যাপক্ষের লোকজনও থরহরিকম্প। কী ব্যাপার বলুন তো, আমতা আমতা করে প্রশ্ন নিয়ে এগিয়ে গেলেন বরপক্ষের এক কর্তা। গম্ভীর গলায় উত্তর মিলল, ‘‘ভয় পাবেন না। একটু খোঁজ-খবর করতে এসেছি।’’ পুলিশ ফিরতেই স্বস্তি ফিরল বিয়েবাড়িতে। ফের সুর লাগল সানাইয়ে।

বিয়েবাড়িতে থেকে বেরিয়ে আসছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

বিয়েবাড়িতে থেকে বেরিয়ে আসছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

গাদা গাদা পুলিশ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিরা। পাত্রপক্ষ, কন্যাপক্ষের লোকজনও থরহরিকম্প। কী ব্যাপার বলুন তো, আমতা আমতা করে প্রশ্ন নিয়ে এগিয়ে গেলেন বরপক্ষের এক কর্তা। গম্ভীর গলায় উত্তর মিলল, ‘‘ভয় পাবেন না। একটু খোঁজ-খবর করতে এসেছি।’’ পুলিশ ফিরতেই স্বস্তি ফিরল বিয়েবাড়িতে। ফের সুর লাগল সানাইয়ে।

শুক্রবার, পুরভোটের আগের সন্ধ্যায় পুলিশ-প্রশাসনের বিশাল বাহিনী বসিরহাটের হোটেল, লজ, বিয়েবাড়িতে ‘বহিরাগত’দের সন্ধানে এ ভাবেই তল্লাশি চালাল। তবে হাতে মেলেনি কিছুই। শেখরবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলছিল। সে কারণেই ভোটের আগে তল্লাশি চালানো হল। তবে বহিরাগত কাউকে পাওয়া যায়নি।’’ পুলিশ কর্তা এ কথা বললেও বসিরহাটের অনেকেই বলছেন, ‘‘বহিরাগতরা যে ক’দিন ধরে এলাকায় দাপিয়ে বেরিয়েছে, তা সকলেই নিজের চোখে দেখেছেন। শেষবেলায় পুলিশ এসে লোক দেখানো খোঁজাখুঁজি করে গেল। ইতিমধ্যেই ব্লক এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে ওরা।’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, গত কয়েক দিন ধরে এই তৎপরতাটা যদি দেখাত পুলিশ, তা হলে ধরা পড়ত অনেকেই। সব মিলিয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেলেও ভোটের দিন গোলমালের আশঙ্কাটা জিইয়েই থাকল বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা।

এ দিন বিকেলের দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) গৌরব লাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে নিজেই আসেন বসিরহাটে। বাহিনী নিয়ে ঘোরেন সাঁইপালা, কলেজ পাড়ার মতো উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে। সন্ধের দিকে তল্লাশি চালাতে নামেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন, এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইসি গৌতম মিত্ররা। ১২টি গাড়ির বিশাল কনভয় নিয়ে এলাকা চষে বেড়ায় পুলিশ।

প্রথমেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা যান ‘পায়েল’ নামে বসিরহাট শহরের একটি বিয়েবাড়িতে। সেখানে তখন ফুলের মালা, আলোয় সাজানো সন্দীপ-পৌলমীর বউভাতের আসর। এত পুলিশ দেখে হকচকিয়ে যাবেন সকলে, সেটাই স্বাভাবিক। পুলিশ কর্তারা বিয়েবাড়ির লোকজনের কাছে জানতে চান, নিমন্ত্রিত বাদে অন্য কেউ সেখানে এসেছে কিনা। উত্তর মেলে, না, তেমন কেউ নেই। পুলিশ কর্তারা তারপরেও দোতলায় উঠে ঘুরে দেখেন পরিস্থিতি। বিয়েবাড়ির অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চান। সন্তুষ্ট হয়ে সকলে বেরিয়ে আসেন সেখান থেকে। বাড়ির কেয়ারটেকারকে পুলিশ জানিয়ে আসে, সন্দেহজনক কাউকে দেখলে যেন সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় থানায়।

এরপরে পুলিশ যায় ‘দিশারি’ নামে পুরসভার অনুষ্ঠানবাড়িতে। কেয়ারটেকারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। সেখানেও বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। কেয়ারটেকারের কাছে পুলিশ কর্তারা জানতে চান, বাইরের সন্দেহজনক কেউ এসেছে কিনা সেখানে বা অন্য কোনও ঘরে তারা উঠেছে কিনা। কেয়ারটেকার জানিয়ে দেন, বিয়েবাড়ির ঘর ছাড়া বাড়িতে অন্য কোনও ঘরই নেই। ফলে নিমন্ত্রিত বাদে অন্য কারও থাকারও প্রশ্ন নেই।

সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশ যায় ইটিন্ডার একটি হোটেলে। মালিকের কাছে খাতাপত্র দেখতে চাওয়া হয়। জানা যায়, ৩২টি ঘর আছে সেখানে। কিছু বাংলাদেশি আছেন। তবে তাঁরা পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ভিসা নিয়েই এসেছেন। পুলিশ কয়েক জন বাংলাদেশি নাগরিককে ডেকে কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু মেলেনি সেখানেও।

‘প্রভাতী’ নামে বাড়িটিতেও বউভাতের আসর বসেছিল। বিয়ে হচ্ছিল রাজকুমার ও রাখির। মেয়ের জামাইবাবু শ্যামল মল্লিক পুলিশকে জানান, নিমন্ত্রিত বাদে কেউ নেই সেখানে। বিয়েবাড়ির মালিকের ছেলে মৃগাঙ্কশেখর গায়েনেকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কর্তারা। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে ওঁরা অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার করেছেন আমাদের সঙ্গে। কিছু প্রশ্ন করে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান।’’

আরও কিছু জায়গায় তল্লাশি শেষ করে থানায় ফেরে পুলিশ। সব দেখেশুনে শহরের এক প্রবীণ নাগরিকের টিপ্পনি, ‘‘এত ঢাকঢোল পিটিয়ে দুষ্কৃতী খুঁজতে এলে কী কোনও কাজ হয়! ওঁরা কি বিয়েবাড়িতে মিষ্টি খেতে এসেছিলেন নাকি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE