Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আসামী ধরতে পানা পুকুরে নামল পুলিশ

পুলিশ জানায়, বাবুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে তাকে ধরতে বাড়ি গিয়েছিল হাড়োয়া থানার পুলিশ। মোটর বাইক নিয়ে পিঠটান দেয় সে। চলে আসে সাঁইপালা শিরিষতলার দিকে।

এই-পুকুরেই: বসিরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র

এই-পুকুরেই: বসিরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

ঘণ্টা তিনেক এঁদো পানা পুকুর ঘেঁটে যখন পাড়ে উঠলেন পুলিশ কর্মীরা, ততক্ষণে সারা গায়ে চুলকানি শুরু হয়েছে। ক্রমে ক্রমে দাগড়া দাগড়া র‌্যাশ শরীর জুড়ে। কপালের ঘাম মুছে একজন বললেন, ‘‘আর খানিকক্ষণ এই অবস্থায় থাকলে তো মরেই যেতাম।’’

যাকে খুঁজতে গিয়ে এমন হাঙ্গামা, তাকে অবশ্য বুধবার রাত ১২টা থেকে ঘণ্টা তিনেক জল ঘেঁটেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, অন্ধকারের সুযোগে কখন জল থেকে উঠে দিব্যি বাড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। বাড়িতেও পুলিশ হানা দেওয়ায় ভোরের দিকে পালায় সেখান থেকে। আপাতত খোঁজ চলছে বাবু কুণ্ডু নামে বসিরহাট কলেজ পাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের। মোবাইল সিমের ব্যবসায়ী বাবুর বিরুদ্ধে প্রতারণা-সহ নানা অভিযোগ আছে হাড়োয়া থানায়।

বাবুকে খুঁজতে গিয়ে বুধবার রাতভর নাকাল হয়েছে হাড়োয়া ও বসিরহাট থানার পুলিশ। কী ভাবে?

পুলিশ জানায়, বাবুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে তাকে ধরতে বাড়ি গিয়েছিল হাড়োয়া থানার পুলিশ। মোটর বাইক নিয়ে পিঠটান দেয় সে। চলে আসে সাঁইপালা শিরিষতলার দিকে।

সেখানে গলির মধ্যে বাইক নিয়ে ঢুকে পড়ে বাবু। হাড়োয়া থানার পুলিশের চোখের আড়ালে হাওয়া হয়ে যায়। গলি থেকে বেরোতেই সেখানে হাজির বসিরহাট থানার একটি টহলদারি ভ্যান। বাবু ধরে নেয়, পুলিশ তাকে নানা দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। মোটর বাইক রেখে দৌড় মারে সে।

বসিরহাট থানার পুলিশ কর্মীরা দেখেন, জিনিসপত্র-সহ নম্বরপ্লেটহীন মোটর বাইক রাস্তার উপরে রেখে আচমকাই পালাল এক যুবক। কোনও গোলমাল আছে ধরে নিয়ে তারাও পিছু নেয় বাবুর।

খানিক দূর গিয়ে একটি পুকুরে ঝাঁপ মারে ওই যুবক। পাড়ে দাঁড়িয়ে তখন পুলিশ কর্মীরা ভাবছেন কী করা যায়।

ইতিমধ্যে লোক জমে যায়। রাত তখন প্রায় ১২টা। নিমেষে রটে যায়, এক মদ্যপ যুবককে তাড়া করে পুকুরে ফেলে মারার চক্রান্ত করছে পুলিশ। জনরোষ বাড়তে থাকে। জনতা এই মারে কী সেই মারে দশা।

পুলিশ বুঝে নেয়, যুবককে খুঁজে পেলে তবেই এর নিষ্পত্তি হবে। সেই মতো এক অফিসার-সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী পাড়ে ইউনিফর্ম খুলে রেখে গামছা পরে নেমে পড়েন এঁদো পুকুরে।

আরও পড়ুন:মমতার আম-সৌজন্যে মুকুলিত দিল্লি দরবার

এ দিকে, ততক্ষণে সেখানে হাজির যুবকের বাবা হাবুল কুণ্ডু। তিনি দাবি করতে থাকেন, ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে পুলিশ। পুকুরে ফেলে মারার তালে ছিল। উত্তেজনার পারদ আরও বাড়তে থাকে।

শেষমেশ তিন ঘণ্টা কেটে গেলেও খোঁজ মেলে না বাবুর। ততক্ষণে হাজির হয়েছে বসিরহাট থানার পুলিশ বাহিনী। দমকল কর্মীরাও আসেন। আসে ডুবুরি। ডুবুরি ও স্থানীয় মানুষজনও পুকুরে নেমে তোলপাড় শুরু করেন। জনতাকে কোনও মতে বোঝানো যায়, পালাতে গিয়ে ওই যুবকই ঝাঁপ মেরেছে পুকুরে। তাতে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়।

হাড়োয়া থানার যে পুলিশ কর্মীরা বাবুকে ধরতে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা অবশ্য এতশত কিছুই জানতেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও বাবুর হদিস না পেয়ে পুলিশ ফের হাজির হয় বাড়িতে। তখন প্রায় ভোর ৪টে। তাঁরা দেখেন, জামা-কাপড় বদলে বাবু গায়ে তেল মাখতে ব্যস্ত। পানা পুকুরে দীর্ঘ ক্ষণ ডুবে থেকে তার গায়েও চুলকানি বেরিয়েছে।

কিন্তু এ বার পুলিশের হাতে আসেনি বাবু। পিছনের দরজা দিয়ে পালায়।

তার বাবা হাবুলকে বসিরহাট থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ছেলেটা পুরো রাত জুড়ে দু’ দু’টো থানার এত জন পুলিশ কর্মীকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ল। যেখান থেকে হোক, ওকে খুঁজে বের করতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE