Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তায় ছেলেরা উৎপাত করলে কী করব কাকু?

পুলিশ কর্তারা মেয়েদের বোঝালেন, অনেক সময়ে পরিচিত লোকজনও ছলেবলে মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে চায়। পাচারের ছক কষে। সে সব কথা গোপন না করে যেন আলোচনা করে মেয়েরা।

প্রশ্নোত্তর: শুক্রবার বসিরহাট থানায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্নোত্তর: শুক্রবার বসিরহাট থানায়। নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র ও নির্মল বসু
হাবরা ও বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ১৩:১০
Share: Save:

স্কুলে যাতায়াতের পথে ছেলের দল খুব ঝামেলা করে কাকু। অনেক বাজে বাজে কথা বলে। কী করা যায়?

মেয়েদের প্রশ্ন শুনে নড়েচড়ে বসলেন পুলিশ কাকুটি। বললেন, সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের লোকজনকে ডেকে জড়ো করবে। আমাদের ফোন করবে।

প্রশ্ন এল, মেয়েরা কেন পাচার হয় কাকু?

খানিক ঢোঁক গিলে পুলিশ কর্তাটি কলা বিনুনি দোলানো কিশোরী মেয়েদের বিষয়টি বোঝালেন সাধ্য মতো। আর সাবধান করলেন। বললেন, ‘‘অপরিচিত কেউ যদি পথেঘাটে এসে ভাব জমাতে চায়, তা হলে সতর্ক থাকবে। ভুল বুঝিয়ে অনেক লোক এ দিক ও দিক নিয়ে যেতে চাইতে পারে। কখনও তাদের সঙ্গে যাবে না। দরকারে বাড়ির লোকজনকে জানাবে। স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নেবে। আর আমরা তো রইলামই।’’ পুলিশ কর্তারা মেয়েদের বোঝালেন, অনেক সময়ে পরিচিত লোকজনও ছলেবলে মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে চায়। পাচারের ছক কষে। সে সব কথা গোপন না করে যেন আলোচনা করে মেয়েরা।

শুক্রবার ‘কন্যাশ্রী দিশারী দিবস’ উপলক্ষে থানায় থানায় হাজির হয় বিভিন্ন স্কুলের মেয়েরা।

হাবরা ১ ব্লকের বেড়গুম হাইস্কুল ও আটুলিয়া নেতাজি আদর্শ বিদ্যাপীঠের ৩০ জন ছাত্রী এ দিন গিয়েছিল হাবরা থানায়। তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়েদের আশ্বাস দেন, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে যদি কেউ উত্যক্ত করে, তা হলে লোক ডেকে জড়ো করতে। পুলিশকে ফোন করতে। দ্বিতীয় দিনও একই রকম ঘটনা ঘটলে, সাদা পোশাকের পুলিশ ওই ছাত্রীর সঙ্গে এলাকায় যাবে। রোমিওকে হাতেনাতে পাকড়াও করবে। নিজের এবং থানার মহিলা পুলিশ অফিসারের মোবাইল নম্বর ছাত্রীদের দেন মৈনাকবাবু।

সরকারি দফতরে কাজকর্ম কেমন হয়, ওই সব দফতর থেকে কেমন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, সে সব মেয়েরা যাতে নিজেরা জানতে পারে, সে জন্যই বিভিন্ন দফতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছাত্রীদের। কন্যাশ্রী তালিকাভুক্ত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা এ দিন থানা, ব্লক অফিস, কৃষি দফতর, ব্যাঙ্কে গিয়েছে।

হাবরা ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘সরকারি দফতরের কাজকর্ম সম্পর্কে ছাত্রীদের সচেতন করা এবং ওই ছাত্রীরা যাতে বাড়ি ফিরে আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।’’

বসিসহাট থানায় সেকেন্ড অফিসার মনিরুল ইসলাম মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। ছিলেন মহিলা এসআই যমুনা মণ্ডলও। এসেছিল দক্ষিণ বাগুন্ডি পিএল হাইস্কুলের প্রিয়া ঘোষ, অঙ্কিতা পালরা। ধলতিথা মিলন মন্দির হাইস্কুলের মেয়েরাও ছিল। এফআইআর কী, জিডি কাকে বলে, এ সব ছিল প্রশ্ন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অফিসারকে রীতিমতো প্রশ্ন করে চাপের মুখে ফেলে ছোট ছোট মেয়েরা। জানতে চায়, নারী পাচারে অভিযুক্তেরা কী ভাবে এলাকায় ঘুরে বেড়়াচ্ছে? জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন অফিসার।

বসিরহাট ১ বিডিও মহম্মদ কায়ুম গাজি বলেন, ‘‘প্রতি মাসে কন্যাশ্রী দিশারীদের নিয়ে বিভিন্ন দফতরের কাজকর্মের খোঁজ নেওয়া হবে।’’

ধলতিথা মিলন মন্দির হাইস্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ দে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অভিনব এই উদ্যোগে সামিল হতে পেরে ছাত্রীরা উৎসাহিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE