Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
স্কুলের কাজে ক্ষোভ

ঘরের টাকায় অডিটোরিয়াম

স্কুলে ক্লাসরুম কম। পড়ুয়া বেশি। ঘর তৈরির জন্য সরকার থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে অডিটোরিয়াম। কেন ক্লাস তৈরির কাজ শেষ না করে অডিটোরিয়াম তৈরিকে প্রাধান্য দিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, উঠছে সেই প্রশ্ন।

বিতর্ক: নির্মীয়মাণ সেই অডিরোটিয়াম। নিজস্ব চিত্র

বিতর্ক: নির্মীয়মাণ সেই অডিরোটিয়াম। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

স্কুলে ক্লাসরুম কম। পড়ুয়া বেশি। ঘর তৈরির জন্য সরকার থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে অডিটোরিয়াম।

কেন ক্লাস তৈরির কাজ শেষ না করে অডিটোরিয়াম তৈরিকে প্রাধান্য দিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, উঠছে সেই প্রশ্ন। তা ছাড়া, ক্লাসঘর তৈরির জন্যই টাকার অনুমোদন এসেছিল সর্বশিক্ষা মিশন থেকে। সেই টাকা সংশ্লিষ্ট দফতরকে না জানিয়ে কেন অন্য খাতে খরচ হচ্ছে, তা নিয়েও আপত্তি উঠছে নানা মহলে।

বিষয়টি নিয়ে মথুরাপুর ২ কৌতলা রামকৃষ্ণ আশ্রম হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষের উপরে ক্ষুব্ধ প্রশাসন। বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই স্কুলের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাসরুম নির্মাণের জন্য দেওয়া টাকায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই স্কুলকে শো-কজ করা হবে।’’

ইতিমধ্যে বাস্তুকার পাঠিয়ে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। সর্বশিক্ষা মিশনের ফিল্ড বাস্তুকার মধুসূধন দাস বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশনের গাইড লাইন না মেনে কোনও ওয়ার্ক অডার ছাড়াই ওই স্কুল নির্মাণ করছে। বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মণ্ডল ও পরিচালন সমিতির সভাপতি বিভূতিভূষণ বৈদ্যের অবশ্য দাবি, নির্মাণ শুরুর সময়ে মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও ব্লক প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়েই কাজ শুরু করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজে কোনও দুর্নীতি হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পুতুল গায়েনেরও একই দাবি। কিন্তু ক্লাস তৈরির কাজই যেখানে শেষ হল না, সেখানে কেন অডিটোরিয়াম তৈরি এত জরুরি হয়ে পড়়ল?

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে টাকার অনুমোদন এসেছিল, তা দিয়ে সব কাজ শেষ হচ্ছে না। আরও টাকার দরকার। তা ছাড়া, অডিটোরিয়াম তৈরি হলেও সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

প্রশাসন ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪৫০ জন। ক্লাসরুম মাত্র ১৬টি। ফলে একটি ঘরে প্রায় দু’শো জন ছাত্রছাত্রীকে বসিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। কোনও কমন রুম নেই, মিড-ডে মিলের খাওয়ার আলাদা ঘর নেই, ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল রাখার শেডও নেই। ২০১৩ সাল থেকে ওই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হওয়ার তিন বছর পার হয়ে গেলেও এখনও এই বিভাগে স্থায়ী শিক্ষক নেই।

পাশাপাশি দু’টি পৃথক ভবন নিয়ে স্কুলটি চলত। তার মধ্যে একটি ভবন প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। সেই দোতলা ভবনটি বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। ওই ভবনে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে একটি ভবনেই স্কুল চালাতে হচ্ছে। ক্লাসরুম বাড়াতে ২০১৬-১৭ বর্ষে জেলা প্রশাসন থেকে ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা অনুমোদন করা হয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন স্কুল ভবনের জন্য জেলা প্রশাসনের টাকা ছাড়াও বিধায়ক তহবিল থেকে ৫ লক্ষ এবং অন্য তহবিল থেকে ১১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই টাকা দিয়ে মাস সাতেক আগে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন নির্মাণ শুরু করেন। এখন ওই কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু শুরু হয়েছে অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ। আর যাবতীয় প্রশ্ন তা নিয়েই। অভিভাবকদের একাংশেরও বক্তব্য, এ দিক ও দিক টাকা না খরচ করে আগে সব বরাদ্দ দিয়ে ক্লাস ঘর তৈরিই দরকার ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Auditorium Class Room
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE