ঝলসে যাওয়া গেরস্থালি। পাশে দেবজিৎ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
রাত তখন প্রায় ২টো। শীতের রাতে লেপ মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমোচ্ছিল কিশোর। হঠাৎ দুদ্দাড় করে গায়ের উপরে ভেঙে পড়ল টালির চাল। ধড়ফড় করে চোখ মেলে ছেলে দেখল, সারা ঘর দাউ দাউ করে জ্বলছে। গায়ে আগুন লেগে ছটফট করছেন মা।
চিৎকার শুরু করে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া দেবজিৎ। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে টালির চাল ভেঙে কোনও মতে উদ্ধার করে তাকে। তবে বাঁচানো যায়নি দেবজিতের মা মাধুরী নাথকে (৩৫)।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল বনগাঁ শহরের কোড়ারবাগান এলাকা। ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র পুড়ে ছাই। দেবজিতের চিকিৎসা চলছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কী ভাবে ঘরে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে দিঘা বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল পাড়ার ছেলেদের। তারই প্রস্তুতি চলায় তখনও জেগে অনেকেই। রাত ২টো নাগাদ হঠাৎই সকলের নজরে পড়ে, মাধুবীদেবীর বাড়ি থেকে আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে। এগিয়ে যেতেই শোনা যায়, ভিতর থেকে প্রাণপণে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করছে দেবজিৎ। সামনের গেটে তালা ঝোলানো, বেরোতেও পারছে না ছেলেটা।
ঘরের টালি ভেঙে উপর দিয়ে কোনও মতে ওই কিশোরকে টেনে তোলে পাড়ার লোক। যে যা পাত্র হাতের কাছে জোটাতে পেরেছিল, তা দিয়ে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন পড়শিরা। এক সময়ে আগুন নিভেও আসে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ। এসেছে দমকলের একটি ইঞ্জিন। তবে দেখা যায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে মাধুরীদেবীর।
তাঁর স্বামী জয়দেব সল্টলেকের সংস্থায় নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাজে চলে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন স্ত্রী-ছেলে। খবর পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন জয়দেব। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বললেন, ‘‘রাত সাড়ে ৯টার সময়েও স্ত্রীর সঙ্গে কথা হল। এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি। বাড়িতে কিচ্ছু আর অবশিষ্ট নেই। ছেলের বইখাতাও সব পুড়ে খাক।’’
হাসপাতালে শুয়ে দেবজিৎ বলে, ‘‘রাতে খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। কখন আগুন লেগেছ টেরও পাইনি। টালির চাল হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় ঘুম ভাঙে। দেখি ঘরের সব জ্বলছে। মায়েরও গায়ে আগুন। ছটফট করছে।’’ দেবজিৎ বলে, ‘‘মাকে কী ভাবে বাঁচাবো, আমিই বা কী ভাবে ঘর থেকে বেরোব, বুঝতে পারছিলাম না। দরজার চাবি কোথায়, ঠাহর করতে পারিনি। মাথার ঠিক ছিল না। চিৎকার শুরু করি।’’
স্থানীয় যুবক অর্পণ নাথ আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। তাঁর আফসোস, ‘‘সকলে মিলে চেষ্টা করেও মহিলাকে বাঁচানো গেল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy