Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিনরাজ্যে যুবকের মৃত্যু, তরুণীর বাড়িতে হামলা

ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে প্রেমিকার বাড়ি গিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল ছেলের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। থানাতেও হামলা চালানো হয়। প্রেমিকা ও তাঁর বাবা-মাকে জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে প্রেমিকার বাড়ি গিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল ছেলের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। থানাতেও হামলা চালানো হয়। প্রেমিকা ও তাঁর বাবা-মাকে জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। গোলমালের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে চারজন। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

বসিরহাটের সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান বিজলি মণ্ডল। তাঁর ছেলে সৌরভ দিন কয়েক আগে মারা যান বেঙ্গালুরুতে। যে সহপাঠিনীর সঙ্গে সৌরভ বাড়ির লোককে না জানিয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন, সেই তরুণীকেই ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে অনুমান বিজলিদেবীদের।

সৌরভ পড়তেন টাকি সরকারি কলেজে। তাঁর সঙ্গেই পড়তেন বসিরহাটের বাসিন্দা ওই তরুণী। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’জনে নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁরা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বিয়ে করেন। ১৬ মার্চ বেঙ্গালুরুর পুলিশ ফোনে বিজলিদেবীদের জানায়, সেখানেই গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে সৌরভের। তাঁর সঙ্গী তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার ভোরে সৌরভের দেহ সংগ্রামপুরের বাড়িতে পৌঁছয়। দেহের একাধিক জায়গায় ক্ষত চিহ্ন ছিল বলে দাবি করেন বিজলিদেবীরা। ওই তরুণী-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তাঁরা খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বসিরহাট থানায়।

বসিরহাটের পুলিশ জানাচ্ছে, ছেলের বাড়ির অভিযোগ তারা বেঙ্গালুরুর পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের আরও বক্তব্য, ছেলের শরীরে যে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে দাবি করছেন ছেলের পরিবার, তা পুলিশকে দেখানো হয়নি। তার আগেই সৎকার করে দেওয়া হয়েছে। ময়না-তদন্ত হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। সেই রিপোর্ট পৌঁছয়নি বসিরহাট থানার কাছে। সেখানকার পুলিশের তদন্তের উপরে ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা সম্ভব বসিরহাট পুলিশের পক্ষে।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে বাড়িতে ফেরেন ওই তরুণী। বিকেল ৪টে নাগাদ বিজলিদেবী ও তাঁর স্বামী দিবস মণ্ডলের নেতৃত্ব শতাধিক মানুষ তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। শুরু হয় ভাঙচুর, মারধর। তরুণীর বাড়িতে একপ্রস্থ ভাঙচুরের পরে তাঁর কাকার বাড়িতেও ভাঙচুর চলে। আসবাবপত্র উল্টে ফেলা হয়। তরুণীকে পেটায় জনতা। বাবা-মাকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মেয়ে ও তাঁর বাবা-মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ দিকে, বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ বসিরহাট থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের দাবি, সৌরভ আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। ওই তরুণী-সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। থানায় আসেন বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত। বিক্ষোভকারীরা এসডিপিও-র ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের একাংশ কয়েকজন মহিলা পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সিভিক ভলান্টিয়ারেরা গেলে তাঁদের উপরেও চড়াও হয়। পুলিশ দিবসবাবু-সহ গোপীনাথ মণ্ডল, পম্পা রায় এবং নাজমা বিবিকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেলহাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

দিবসবাবু বলেন, ‘‘আমার একমাত্র ছেলে এ ভাবে চলে যাবে, তা কেউ মানতে পারছে না। মেয়েটির কাছে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য যাওয়া হয়েছিল। মারধর কিংবা ভাঙচুরের অভিযোগ মিথ্যা।’’ তরুণীর বাবা বলেন, ‘‘প্রধান তাঁর ক্ষমতা দেখানোর জন্য লোকজন নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন।’’ মেয়ের বাবার বক্তব্য, ‘‘ছেলেমেয়েরা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরে সব মেনে নেওয়ার জন্য বার বার বলা হয়েছিল। সে কথায় কান দেয়নি ছেলের বাড়ি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unnatural Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE