Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শ্বাসরোধ করে খুনের নালিশ, ধৃত স্বামী-সহ ৪

লক্ষ্মীদেবী আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন, ততক্ষণে মেয়ে মারা গিয়েছে। তাকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:১৭
Share: Save:

সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মেয়ের শ্বশুরের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন মা লক্ষ্মী হালদার। ফোনে বলা হয়, ‘‘মেয়ের শরীর খারাপ, চলে আসুন।’’

ফোন পেয়ে লক্ষ্মীদেবী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ওই ফোনের পরে আরও কয়েকবার লক্ষ্মীদেবীকে ফোন করেছিলেন মেয়ের শ্বশুর। শেষবার বলেন, ‘‘আপনি মেয়ের আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চলে আসুন।’’

লক্ষ্মীদেবী আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন, ততক্ষণে মেয়ে মারা গিয়েছে। তাকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। লক্ষ্মীদেবীদের অভিযোগ, মেয়েকে দীর্ঘ দিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে পণের টাকার জন্য শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। শেষে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

বুধবার সকালে গাইঘাটা থানার ঢাকুরিয়া এলাকার ঘটনা। লক্ষ্মীদেবী থানায় মেয়ে রিয়া বাগচির (২২) স্বামী বিশ্বজিৎ, শ্বশুর বিকাশ, শাশুড়ি পুষ্প ও দেওর সুরজিতের নামে খুনের অভিযোগ করেছেন। পুলিশ চারজনকেই গ্রেফতার করেছে। বুধবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে পেট্রাপোল থানার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা রিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ঢাকুরিয়ার বিশ্বজিতের। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘বিয়েতে ওরা বলেছিল, বেশি কিছু চাহিদা নেই। শুধু মেয়েকে পাঠিয়ে দিলেই হবে। তারপরেও আমরা সাধ্য মতো খাট-আলমারি, গয়না, নগদ টাকা দিয়েছিলাম।’’ মেয়ের মায়ের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে আরও বেশি টাকার দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে মারধর শুরু হয়।

রিয়া খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। মুখ ফুটে কিছু বলতে চাইতেন না। তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেওয়া হত না রিয়াকে। ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘আমরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গেলে আমাদের সঙ্গে কেউ কথা বলত না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। নানা ভাবে অপমান করত।’’

মৃতের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, বছর দু’য়েক আগে রিয়ার বাবা নিমাইবাবু আত্মহত্যা করেন। তিনি একটি চিটফান্ড সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। বাজারে প্রচুর টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে, মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল না মেয়ের বাড়ির লোকের।

অভিযোগ, এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন নিমাইবাবু।

কিছু দিন আগে লক্ষ্মীদেবী মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে ৫ হাজার টাকা দিতে গিয়েছিলেন। সেই ‘সামান্য’ টাকা তারা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। উল্টে অপমানও করে বলে অভিযোগ। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘শনিবার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। মেয়ে বলেছিল, কেন এসেছে। চলে যাও। ওরা চায় না তুমি আসো।’’

ওই দিন শাশুড়ি মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিল বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীদেবী। তাঁর আফসোস, মেয়ের চিকিৎসার দরকার ছিল। কিন্তু আমি আয়ার কাজ করে সংসার চালাই। টাকা ছিল না। তাই মেয়েটাকে আনতে পারিনি। ভেবেছিলাম টাকার ব্যবস্থা করে মেয়েকে নিয়ে আসব। তার আগেই সব শেষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

husband Arrest Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE