Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভোট বয়কট গ্রামবাসীদের, পড়ল মাত্র ১১৩টি ভোট

বাগদা ব্লকের রণঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ডহরপোতা ও রঘুদেব গ্রামের সবাই এই ডাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু এ দিন দেখা যায় ১১৩টি ভোট পড়েছে। 

ফাঁকা-ভোটকেন্দ্র: সকাল ১০টা। তখনও কেউ আসেননি ভোট দিতে। ছবি: নির্মাল্য প্রামণিক

ফাঁকা-ভোটকেন্দ্র: সকাল ১০টা। তখনও কেউ আসেননি ভোট দিতে। ছবি: নির্মাল্য প্রামণিক

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

গ্রামের মানুষ সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ওই গ্রামে ফের বুধবার ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। যা গ্রামের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। ফলে ওই গ্রামে ভোট বয়কটের ডাক দেন তাঁরা।

বাগদা ব্লকের রণঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ডহরপোতা ও রঘুদেব গ্রামের সবাই এই ডাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু এ দিন দেখা যায় ১১৩টি ভোট পড়েছে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রণঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি বুথের মানুষের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছিল স্থানীয় ডহরপোতা এফপি স্কুলে। দু’টি বুথে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫৯৩ জন। সোমবার ভোটের দিন সকালে ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হয়। সেখানে গ্রামের একজন দেখতে পান গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য বিশ্বনাথ সর্দারের প্রতীক কুড়ুলের বদলে কাস্তে হাতুড়ি হয়ে গিয়েছে। ওই যুবক বিষয়টি সবাইকে জানান। চারটি ভোট পড়ার পর ভোট বন্ধ হয়ে যায়। পরে কমিশনের তরফে নতুন করে নির্দল প্রার্থীর কুড়ুল প্রতীক দেওয়া ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হয়। দুপুর ২টোর পর ফের ভোট শুরু হয়। ভোট শেষ হয় রাত দেড়টা নাগাদ।

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে সোমবার ভোট শুরু করা হয়েছিল। সে কারণে ফের বুধবার ওই দু’টি বুথে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।’’

কিন্তু গ্রামবাসীরা কমিশনের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা রামপ্রসাদ বিশ্বাস, ছায়া বালা, অসীম তরফদারেরা বলেন, ‘‘সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ভোট দিয়েছি। এখানে কোনও গোলমাল আশান্তি হয়নি। তা সত্ত্বেও কেন ফের ভোট দিতে যাব। আগের দিনের ভোটের তো কোনও মূল্যই রইল না।’’ গ্রামবাসীর একাংশ জানালেন, দ্বিতীয়বার ভোট দেওয়া মানে তাঁদের অসম্মান করা। সে জন্যই তাঁরা ভোট দেননি।

বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ ডহরপোতা এফপি স্কুলের দু’টি বুথেই পুলিশে ভর্তি ছিল। কিন্তু কোনও ভোটারের দেখা মেলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তখনও পর্যন্ত ১টি মাত্র ভোট পড়েছে। পরে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রূপান্তর সেনগুপ্ত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে গ্রামবাসীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করেন। বাগদার তৃণমূল বিধায়ক দুলাল বর গ্রামের মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য বোঝাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাঁকে ফিরিয়ে দেন।

জানা যায়, দু’টি বুথ মিলিয়ে ১১৩ জন মানুষ ভোট দিতে এসেছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ প্রার্থী পরিতোষ সাহা গ্রামে কর্মীদের নিয়ে এসে দীর্ঘক্ষণ ধরে বোঝান। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় এক দুষ্কৃতী মানুষকে ভোট দিতে নিষেধ করেছেন বলে মানুষ ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারছেন না। গ্রামবাসী অবশ্য ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বিকেল ৪টের পর কিছু মানুষ ভোট দেন।

কেন তাঁরা ভোট দিলেন?

তাঁদের কথায়, ‘‘অনেক ভাবার পর আমাদের মনে হল যদি ভোট না দিই তাহলে আমাদের ভোটটা নষ্ট হবে। তা ছাড়া এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভোট দিয়ে এসেছি।’’ যাঁরা ভোট দিলেন তাঁদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE