Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝুলছেন  স্বামী-স্ত্রী, দেওয়ালে ‘সুইসাইড নোট’

ওই ঘরে টুম্পাদেবীর নাম করে লেখা আছে, তাঁদের কম্পিউটার, টেবিল ও গেরস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম যেন তাঁর দিদি ও বোনপোকে দেওয়া হয়। আর আশিসবাবুর নাম করে ভাই অমিতের উদ্দেশে লেখা, গৌতমবাবু যত দিন চাইবেন, তাঁকে যেন ওই বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

কোল্যাপসিবল গেট খুলে ভিতরে ঢুকতেই চমকে উঠেছিলেন ভাড়াটে! তাঁর ঘরের সামনেই বারান্দায় সিলিং থেকে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন বাড়ির মালিক! হাত-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। ভাড়াটের চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা এসে দেখলেন, অন্য একটি ঘরে ঝুলছেন তাঁর স্ত্রী! সেই ঘরের দেওয়ালে লাল কালিতে লেখা রয়েছে মৃত্যুর কারণ। আর আলমারি ও দেওয়ালে সাঁটা বিভিন্ন কাগজে লেখা রয়েছে, ঘরের জিনিসপত্রের মধ্যে কাকে কোনটা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে নিমতা থানা এলাকায় এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছে এক দম্পতির মৃতদেহ। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম আশিস মুখোপাধ্যায় ওরফে বাপি (৪৯) ও টুম্পা মুখোপাধ্যায় (২৯)।

আপাত দৃষ্টিতে ঘটনাটিকে জোড়া আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পুলিশের প্রশ্ন, স্বামী ও স্ত্রী দু’জন কি একই সঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছেন, না কি কোনও এক জন অপর জনকে খুন করে তার পরে আত্মঘাতী হয়েছেন? তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এমনও হতে পারে, দু’জনকেই খুন করে তার পরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

নিমতার রামপ্রসাদনগরের স্কুল রোডের একটি দোতলা বাড়ির একতলায় থাকতেন সস্ত্রীক আশিসবাবু। সামনের দিকের একটি ঘরে ভাড়া থাকেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ‌নামে এক প্রৌঢ়। দোতলায় থাকেন আশিসবাবুর ভাই, পেশায় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী অমিত মুখোপাধ্যায়। আশিস ও অমিতই ওই বাড়ির মালিক।

পুলিশ জানায়, গৌতমবাবু একটু কাজে বেরিয়েছিলেন। সকাল আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরে কোল্যাপসিবল গেট খুলে বারান্দায় ঢুকতেই তিনি দেখেন, মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। সিলিংয়ের একটি হুক থেকে দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন আশিস। তাঁর সারা শরীরে রক্ত। প্রৌঢ়ের চেঁচামেচিতে দোতলা থেকে নেমে আসেন অমিতবাবুর স্ত্রী রিক্তাদেবী। আসেন প্রতিবেশীরাও।

প্রতিবেশীরা জানান, গৌতমবাবুর ঘরের পিছনের দিকে আশিসবাবুর ঘর। ওই কোল্যাপসিবল গেট দিয়ে বেরিয়ে তবে সেখানে যেতে হয়। ওই ঘরেই মেলে টুম্পাদেবীর ঝুলন্ত দেহ। আশিসবাবুর দেহ মেঝেতে হাঁটু মোড়া অবস্থায় ছিল। আর টুম্পাদেবীর পা কিছুটা ভাঁজ করা অবস্থায় মেঝে ছুঁয়ে ঝুলছিল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘরে যত লেখা পাওয়া গিয়েছে, তার প্রায় সবেতেই ওই দম্পতি মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন আশিসবাবুর মাকে। তাঁর সঙ্গে চলা মামলা এবং অশান্তির কারণেই এই আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়েছে। ওই সব লেখায় মাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, তিনি যেন দু’জনের কারও দেহই স্পর্শ না করেন। ওই দম্পতি কয়েক দিন আগেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। কারণ, একটি লেখার নীচে তারিখ দেওয়া রয়েছে, ১৩ মার্চ।

ওই ঘরে টুম্পাদেবীর নাম করে লেখা আছে, তাঁদের কম্পিউটার, টেবিল ও গেরস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম যেন তাঁর দিদি ও বোনপোকে দেওয়া হয়। আর আশিসবাবুর নাম করে ভাই অমিতের উদ্দেশে লেখা, গৌতমবাবু যত দিন চাইবেন, তাঁকে যেন ওই বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আগে মুম্বইয়ে কাজ করতেন আশিস। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে চলে এলেও আর কোনও চাকরিতে যোগ দেননি। মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়ি পুরোহিত হিসেবে পুজো করতে যেতেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে তিন বছর আগে টুম্পাকে বিয়ে করেন আশিস। টুম্পাদেবী জীবনবিমার এজেন্ট ছিলেন। নিঃসন্তান ওই দম্পতি পাড়াতেও কারও সঙ্গে বেশি কথা বলতেন না। তবে মায়ের সঙ্গে একেবারেই বনিবনা ছিল না আশিসদের। অভিযোগ, কয়েক বছর আগে মাকে মেরে তাড়িয়ে দেন আশিস। তা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। এ দিন রিক্তা বলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে অশান্তি চলছিল। মা অন্যত্র থাকেন। তবে ওঁরা এমন কেন করলেন, বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE