কৈলাসবাবুর সঙ্গে দেবদাস (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
কয়েকশো অনুগামীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ ছিলেন বনগাঁ শহরের ব্যবসায়ী দেবদাস মণ্ডল।
শনিবার কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দফতর দেবদাসবাবুকে উত্তরীয় পরিয়ে দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সঙ্গে ছিলেন মুকুল রায় ও বিজেপির সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
এই ঘটনায় বনগাঁর রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। পথে-ঘাটে চায়ের দোকানে আলোচনা চলছে বনগাঁর পরিচিত মুখ দেবদাসবাবুকে নিয়ে। সরাসরি কোনও দলে যোগ না দিলেও এর আগে সিপিএম এবং পরে তৃণমূলের সঙ্গে দেবদাসবাবুর হৃদ্যতা বনগাঁবাসীর অজানা নয়। বাম জমানায় বিরোধীরা সিপিএমের হয়ে ‘ভোট করানোর’ অভিযোগ তুলত দেবদাসবাবুর বিরুদ্ধে। ২০১১ সালের পরে অবশ্য দেবদাসবাবুর সঙ্গে তৃণমূলের সখ্য বাড়ে। শাসকদলের সভা-মিছিলেও তাঁকে নানা সময়ে দেখা গিয়েছে। মুকুল রায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় ছিল বরাবরই।
বছর পঞ্চাশের দেবদাসবাবুর বাড়ি বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জে। ঐক্য সম্মিলনীর দুর্গা পুজোর নামডাক আছে বনগাঁয়। সেই পুজোর মূল কাণ্ডারী দেবদাসবাবুও এলাকায় পরিচিত নাম। মূলত পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দেবদাসবাবু বাস-অটো সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নানা পদে থেকেছেন বিভিন্ন সময়ে। তাঁর পুজোর উদ্বোধনে এসেছেন মুকুলবাবু। মঞ্চ থেকে দেবদাসবাবুর প্রশংসাও করেছেন। মুকুল রায় বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দেবদাসবাবুর রাজনৈতিক গতিবিধি নিয়ে কৌতুহল ছিল। তবে এত দ্রুত তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা আন্দাজ করতে পারেনি স্থানীয় রাজনৈতিক মহল।
বিজেপিতে আসার পিছনে দেবদাসবাবুর যুক্তি, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র ফেরাতে পারে একমাত্র বিজেপি-ই। তা ছাড়া, মুকুল রায় আমার রাজনৈতিক আদর্শ। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে রাজনীতি করতে চাই। সে কারণেই বিজেপিতে যোগ দিলাম।’’
বিতর্ক নানা সময়ে দেবদাসের পিছু ছাড়েনি। অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খুন-সহ নানা অভিযোগ তুলেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। দেবদাসবাবুর সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের ঘনিষ্ঠতার কথা এখন মানতে চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘উনি কখনও তৃণমূল করেননি। সিপিএম করতেন। এখন বিজেপিতে যোগ দিলেন। ওঁর বিরুদ্ধে অতীতে পুলিশের খাতায় নানা বেআইনি কাজের অভিযোগ রয়েছে। জেলও খেটেছেন। তাঁর যোগ দানে তৃণমূলে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
দেবদাসবাবুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘‘এত দিন কোনও অভিযোগ উঠল না, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে।’’
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘কে কী করেছে, বনগাঁর মানুষ সবই জানেন।’’
নানা সময়ে অপরাধমূলক নানা ঘটনায় জড়িয়েছে যাঁর নাম, এমন একজনকে দলে টেনে কতটা সুবিধা করতে পারব বিজেপি? দলের নেতা শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী খুন হলে সমাজসেবী হয়ে যায়। আর তৃণমূল ছাড়লে হয়ে যায় দুষ্কৃতী। আমরা সকলকেই সুযোগ দিতে চাই। দেশগঠনের কাজে লাগাতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy