Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাত-বিরেতে এজলাস, ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা

শীতের রাতে জ্বলে উঠল কাকদ্বীপ আদালত কক্ষের আলো। রাত প্রায় ১০টা। শুরু হল সাগর মেলা থেকে গ্রেফতার ৩৪ জনের বিচারের প্রক্রিয়া। এ রকমই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে রবিবার। আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালতের একটি বড় অংশ এতে ক্ষুব্ধ।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

শীতের রাতে জ্বলে উঠল কাকদ্বীপ আদালত কক্ষের আলো। রাত প্রায় ১০টা। শুরু হল সাগর মেলা থেকে গ্রেফতার ৩৪ জনের বিচারের প্রক্রিয়া।

এ রকমই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে রবিবার। আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালতের একটি বড় অংশ এতে ক্ষুব্ধ। আইনজীবীদের দাবি, বন্দিদের দীর্ঘক্ষণ খেতে দেওয়া হয়নি। সে কথা অবশ্য মানছেন না সুন্দরবন পুলিশ জেলার কর্তারা।

গঙ্গাসাগর মেলায় গত বছর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে অস্থায়ী আদালত। তাই সাগরে মেলার সময়ে ধৃত সব বন্দিকেই আনা হচ্ছে কাকদ্বীপ আদালতে। কিন্তু মুড়িগঙ্গায় ভাটার জেরে বিপত্তি। রাত পৌনে ১০টায় কাকদ্বীপে অভিযুক্তদের নিয়ে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই চুরি, শান্তিভঙ্গ করা, মদ খেয়ে গোলমাল পাকানোর মতো অভিযোগ আছে। বিচার শেষ করে জামিন পেতে পেতে বেজে যায় রাত প্রায় সাড়ে ১০টা। কেউ বাড়ি ফিরতে পারেননি।

কাকদ্বীপ আদালতের আইনজীবী চঞ্চল পণ্ডার অভিযোগ, ‘‘মেলায় ১৩ জানুয়ারি অনেককেই ধরা হয়েছিল। তাদের খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে বন্দিরা অভিযোগ করেছেন আমাদের কাছে। দু’জন মহিলা-সহ ওই বন্দিরা রাতে জামিন পাওয়ার পরে কোথায় ফিরবেন?’’

পুলিশের দেওয়া গ্রেফতার মেমোতে ওই ৩৪ জনের বেশিরভাগই ১৩ তারিখে গ্রেফতার হয়েছিল বলে দাবি কাকদ্বীপের আইনজীবীদের। কয়েকজনকে ধরা হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি। অনেককেই ২৪ ঘণ্টা পরে আদালতে তোলা নিয়েও ক্ষুব্ধ আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, আদালত চলার জন্য আইনজীবী, ল ক্লার্ক, পেশকার— সকলকেই অনেক রাত পর্যন্ত হেনস্থা হতে হয়েছে। অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে এসিজেএম আবির চট্টোপাধ্যায়কেও।

কাকদ্বীপ আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানস দাসের দাবি, মেলা চত্বর থেকে আদালত সরিয়ে নেওয়ার জেরেই এ রকম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থী এবং আদালতের সঙ্গে যুক্ত সকলকে। ভাটার সময়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা করে ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকছে। তা ছাড়া, মুড়িগঙ্গা পেরোতেও প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এ রকম পরিস্থিতিতে বন্দিদের নদী পার করে আনার বিষয়টি নিয়েও ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।

কেন আগে থেকে কাকদ্বীপে পাঠানো হল না বন্দিদের? পুলিশ কর্তাদের দাবি, ররিবার দু’টি দুর্ঘটনার জেরে গঙ্গাসাগর-কচুবেড়িয়া রোডে ট্রাফিক ধীর গতিতে চলেছে। মেলা ফেরত যাত্রীদের ভিড় ছিল। কচুবেড়িয়া থেকে মুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কাকদ্বীপ আসতে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘খেতে না দেওয়ার অভিযোগ একেবারে মিথ্যে। বিকেলে ওঁদের কচুবেড়িয়ায় চা পর্যন্ত খাওয়ানো হয়েছিল। তা ছাড়া, প্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ভাটা ছিল। সে সময়ে বন্দিদের নিয়ে মুড়িগঙ্গা পেরোনো অসম্ভব ছিল।’’

বন্দিদের জন্য মেলা চত্বরে আদালত থাকলে অসুবিধা হচ্ছিল বলে দাবি করেছিল পুলিশ। যে সব মামলায় এ রকম অভিযুক্তদের ধরা হয়, সেগুলিতে জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই মেলায় জামিন পাওয়ার পরে তারা আবার চুরি, কেপমারি, মদ খেয়ে ঝামে‌লা পাকানোর মতো কাজ করে বলে অভিজ্ঞতা পুলিশের। সেখানে একবার মুড়িগঙ্গা পার করে কাকদ্বীপ থেকে জামিন পেয়ে ফের মেলা চত্বরে গিয়ে হাজির হতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। গোলমালে আশঙ্কা কমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE