Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অল্প বয়সে বিয়ে রুখতে ছাত্রীদের বার্তা

আঠারো বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করতে এ রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা। কিন্তু তারপরেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অনেক অভিভাবকই পরিণত বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগেন। কিছু ঘটনা সামনে আসে। জানতে পেরে তা বন্ধ করে পুলিশ-প্রশাসন।

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

নিজেরা আঠারো বছরের আগে বিয়ে করো না, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-বন্ধুদের অল্প বয়সে বিয়ে হচ্ছে জানতে পারলে খবর দাও পুলিশ-প্রশাসনকে।

অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির যে সব মেয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের তালিকাভুক্ত, তাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে এই বার্তা দিলেন প্রশাসনের কর্তারা।

আঠারো বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করতে এ রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা। কিন্তু তারপরেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অনেক অভিভাবকই পরিণত বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগেন। কিছু ঘটনা সামনে আসে। জানতে পেরে তা বন্ধ করে পুলিশ-প্রশাসন। জানা যায়, হয় অভিভাবকেরা জানতেন না আঠারো বছর বয়সের আগে বিয়ে দিলে মেয়ের নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যা হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রেও উত্তর মেলে, ‘‘অভাবের সংসার। ভাল পাত্র পেয়ে হাতছাড়া করতে চাইনি।’’

নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে সরকারের নানা উদ্যোগ এ ভাবেই থমকে যায় বহু ক্ষেত্রে। তবে প্রশাসনের কর্তাদের মতে, প্রত্যন্ত গ্রামের কোথায় লুকিয়ে কে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, তা যদি একবার তাঁদের কানে ওঠে, তাঁরা বিয়ে আটকানোর সব রকম চেষ্টা করেন। কখনও বাড়ি গিয়ে বোঝানো হয় অভিভাবকদের। কখনও আইনের ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে শুধু মেয়েটির পক্ষে ক্ষতিকারক তা-ই নয়। এটা আইন-বিরুদ্ধ কাজও বটে।

নাবালিকা বিয়ে আটকাতে এ বার কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত মেয়েদেরও কাজে লাগাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের চকবড়ালিতে ওই মেয়েদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র, ব্লক কন্যাশ্রী প্রকল্প আধিকারিক শুভাশিস মিত্র-সহ অন্যান্যরা। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে জানানো হয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লক এলাকার ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় ৮,৩৪৮ জন কন্যাশ্রী-মেয়ে আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সকলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের কর্তাদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। বলা হয়েছে, যে কোনও মূল্যে বাল্যবিবাহ রুখতেই হবে। আর এ কাজে সাহায্য করতে পারে এই মেয়েরাও। প্রতিটি কন্যাশ্রী মেয়ে খেয়াল রাখবে, তার বাড়ি বা আশেপাশের এলাকায় কোনও নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে কিনা। যদি তেমন কিছু কানে আসে, তা সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের কর্তা, চাইল্ড লাইনে ফোন করে জানাবে। এই মেয়েদের ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’ সম্বোধন করে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ রুখতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করলে পুরস্কৃতও করা হবে। এ ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের পরিচালনা করবে প্রতিটি স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাব। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত কয়েক মাসে কন্যাশ্রী মেয়েদের খবরের ভিত্তিতে ভাঙড়ের খড়গাছি, ঘটকপুকুর, চড়িশ্বর, চাঁদপুর, শাঁকশহর এলাকার ৫টি নাবালিকা মেয়ের বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে।

বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ এক অভিশাপ। প্রতিটি গ্রামে, পাড়ায় কন্যাশ্রী মেয়েরা রয়েছে। তারা যদি আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে, তা হলে আমরা সঠিক সময়ে খবর পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE