আদালতের পথে ধৃত তরুণ। নিজস্ব চিত্র
তরুণটিকে পুলিশ অফিসারেরা যে প্রশ্নই করছিলেন তরুণটি তার উত্তরে শুধু ‘উউউ’ শব্দ করছিল এবং হাত উপরে তুলে দূরে কিছু একটা সংকেত করছিল। ‘তোর বাড়ি কোথায়?’ বা ‘নাম কী?’ এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তরে কিছুই বলছিল না সে। তবে খাতা পেন দিলে সে নিজের নাম-ঠিকানা লিখে দিচ্ছিল।
যদিও এক এক বার নিজের নাম ও ঠিকানা এক এক রকম লিখছিল সে। পুলিশ কর্তারা তার লিখে দেওয়া কয়েকটি এলাকায় তাকে সঙ্গে করে নিয়েও গিয়েছেন তার পরিবারের লোকজনের সন্ধান পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোনও হদিশই মেলেনি।
দিন তিনেক আগে বনগাঁ থানার পুলিশ স্থানীয় সুঁটিয়া সীমান্ত এলাকায় উদভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে দেখে ওই ছেলেটিকে উদ্ধার করে। তার পরনে জিনস ও সবুজ রঙের টিশার্ট। গায়ের রঙ ফর্সা।
পুলিশই তরুণটির খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করেছিল। বোবা ছেলেটির প্রতি আসলে মায়া জন্মে গিয়েছিল বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টোরাজের। কী ভাবে তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়, তা নিয়ে পুলিশ কর্তারা উঠে-পড়ে চেষ্টা শুরু করেন।
তখনও পর্যন্ত পুলিশ কর্তারা বুঝতেই পারেননি তরুণটি নিখুঁত অভিনয় করে চলেছে। বিপত্তি শুরু হল শনিবার সকালে। বাড়ির ঠিকানা লিখতে দিলে ছেলেটি হঠাৎ ওডিশা একটি হোমের নাম লিখে ফেলে। সন্দেহ হয় তদন্তকারী অফিসারদের। বনগাঁ থানার সাব ইন্সেপেক্টর চৈতন্য মণ্ডলের কয়েকজন পরিচিত থাকেন ওড়িশার ওই এলাকায়। তিনি সেখানে যোগাযোগ করেন পরিচিতদের সঙ্গে। যোগাযোগ করা হয় সেখানকার পুলিশের সঙ্গে। হোমটির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। ছেলেটির ছবি পাঠানো হয়। জানা যায়, ছেলেটি ওই হোমেই ছিল। দিন কয়েক আগে সে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সে কথা বলতে পারে! ওই তথ্য হাতে আসার পর পুলিশ ছেলেটিকে ফের জেরা শুরু করে। তাকে একটু ভয়ও দেখায়। তখনই সে সে কথা বলতে শুরু করে। পুলিশকে সে জানায়, তার নাম তামিম হাসান, বয়স ১৯ বছর, বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ এলাকায়।
পুলিশ তার বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের মামলা রুজু করেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওড়িশাতে সে চুরি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। তার পর থেকে সে হোমেই ছিল। সেখানে দোতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে সে পালিয়েছিল। কয়েক বছর আগে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সে চোরাপথে এ দেশে ঢুকেছিল। তার পর ওড়িশায় চলে গিয়েছিল। তবে চুরির কথা সে অস্বীকার করেছে।
সব কিছু ছাপিয়ে পুলিশ কর্তাদের আলোচনার বিষয় এখন একটিই। কী করে সে তিনদিন বোবার অভিনয় করে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy