Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘর ছেড়ে পালানো শান্তনুকে ফিরিয়ে দিলেন এনদাদুল-মিনারা

সুযোগ এসে যায়। ফেসবুক ঘেঁটে শান্তনুর ঠিকানা জেনে যান এনদাদুল। যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে। শেষমেশ তাঁদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন ছেলেটিকে।

শান্তনু দাস

শান্তনু দাস

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

মায়ের বকুনি খেয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল বছর পনেরোর কিশোর। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যায় বর্ধমানের গুসকরা স্টেশনে।

স্টেশনে ঘুমিয়ে ছিল। সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে বাড়িতে ঠাঁই দেন এনদাদুল মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী মিনা বিবি। ছেলেটি বাড়ির ঠিকানা বলতে চায়নি। বিশেষ জোর করেননি এনদাদুলরা। কিন্তু বুঝেছিলেন, সামান্য কোনও কারণে ঘর ছেড়েছে শান্তনু দাস। ভিনধর্মী ছেলেটিকে বাড়ি রেখে যত্নআত্তি শুরু করেন তাঁরা। আর খেয়াল রাখেন, যদি কোনও ভাবে ঠিকানা জানা যায়। বাড়িতে না জানি কেমন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন ছেলের বাবা-মা।

সুযোগ এসে যায়। ফেসবুক ঘেঁটে শান্তনুর ঠিকানা জেনে যান এনদাদুল। যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে। শেষমেশ তাঁদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন ছেলেটিকে।

আউশগ্রাম থানার গুসকরার বছর বত্রিশের এনদাদুল গাড়ি চালান। বললেন, ‘‘বিপদে পড়লে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর থেকে বড় কাজ আর হতে পারে না। ধর্ম, জাতি এ সব কোনও বাধা হতে পারে না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবরার বাণীপুরের শান্তনু ২২ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। সন্ধ্যায় পরিবারের তরফে হাবরা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নামে পুলিশ।

শান্তনু স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। বাবা সুমনবাবু মাছ ফেরি করেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে তাঁর। বাড়িতে ছোট একটি মুদির দোকান রয়েছে। সেটি দেখভাল করেন স্ত্রী শুক্লাদেবী।

পুলিশ জানিয়েছে, ছেলের বইয়ের ব্যাগে কয়েকশো টাকা, সিগারেট-দেশলাইয়ের প্যাকেট দেখে বকাবকি করেছিলেন শুক্লাদেবী। সেটা ২১ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা। রাতে মা ছেলে কেউ খাওয়া-দাওয়া করেননি। পর দিন সকাল থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় শান্তনু।

পুলিশ জানতে পেরেছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে শান্তনু ট্রেন ধরে বনগাঁ আসে। সেখান থেকে ট্রেনে রানাঘাট, নৈহাটি, ব্যান্ডেল, রামপুরহাট, রাঁচি যায়। পরে ফেরে রামপুরহাটে। শুক্রবার যায় গুসকরা স্টেশনে।

বিকেলের দিকে প্ল্যাটফর্মে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। স্থানীয় এক ভিক্ষুকের নজরে আসে বিষয়টি। তিনি এনদাদুলের বাড়িতে রাতে বিশ্রাম নেন। তিনি এনদাদুলের স্ত্রী মিনাকে জানান, প্ল্যাটফর্মে এক কিশোর শুয়ে রয়েছে।

জ্যাকেট, প্যান্ট পরা ছেলেটিকে দেখে মিনার মনে হয়, ভাল ঘরের ছেলে। নিশ্চয়ই ঝগড়াঝাটি করে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। তিনি বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্তনুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এনদাদুল বলেন, ‘‘ছেলেটি আমাদের কাছে একটি হাঁড়ি চেয়েছিল। ওর কাছে কিছুটা চাল ছিল। ভাত রান্না করে নেবে বলে। কিন্তু আমাদের মায়া হয়। আমরা ওকে বাড়িতে রেখে স্নান-খাওয়ার ব্যবস্থা করি।’’

এনদাদুল জানান, শনিবার দুপুরে তাঁর মোবাইল থেকে ফেসবুক খুলেছিল শান্তনু। সেটা নজর এড়ায়নি গৃহকর্তার। তিনি ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে একটি ফোন নম্বর পান। যোগাযোগ করে জানতে পারেন, সেটি শান্তনুর দিদির অ্যাকাউন্ট। এরপরেই এনদাদুল কথা বলেন শান্তনুর বাবা-মায়ের সঙ্গে। তাঁরা ছেলের খবর পেয়ে তো কেঁদেই আকুল। রবিবার দুপুরে পরিবারের লোকজন হাবরা থানার পুলিশকে নিয়ে এনদাদুলের বাড়িতে যান। হাবরার আইসি বলেন, ‘‘ছেলেটি জানিয়েছে, মায়ের উপরে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিল। তবে এখন মন দিয়ে পড়াশোন করতে চায়। ওকে অনেক ভাবে বোঝানো হয়েছে।’’

মিনার অবশ্য মন খারাপ। দু’দিনেই শান্তনুর উপরে বড় মায়া পড়ে গিয়েছিল। আবার আসবে, দেখা করতে, জানিয়ে গিয়েছে ছেলেটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE