অপেক্ষা: নিজস্ব চিত্র।
শুরু হতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ নাওভাঙা নদী সংস্কারের কাজ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি বনগাঁর বাসিন্দা।
সেচ দফতরের বিদ্যাধারী ড্রেনেজ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সোমেন মিশ্র জানান, রবিবার থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। খরচ হচ্ছে ৩ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। কয়েক মাস আগে টেন্ডার ডেকে একটি সংস্থাকে কাজের বরাত দিয়েছিল সেচ দফতর। সোমেনবাবু বলেন, ‘‘জুন মাসের শেষে বরাত পাওয়া সংস্থা কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে বর্ষা নেমে গিয়েছিল। জলকাদায় কাজের গুণগত মান খারাপ হত। তাই কাজ শুরু করা হয়নি।’’ তা ছাড়া, সে সময়ে সংস্কারের কাজ শুরু হলে নদী-সংলগ্ন জমিতে ধান চাষের ক্ষতির আশঙ্কাও ছিল।
এর আগে সংস্কারের কথা এগিয়েছিল। নদীর মধ্যে কিছু যন্ত্রপাতি রাখা হয়। স্থানীয় চাষি ও সাধারণ মানুষ যাতে সহযোগিতা করেন, সে জন্য বৈঠক করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গ্রামবাসীদের থেকে সহযোগিতার আশ্বাসও মেলে। তারপরেও কাজ এত দিন থমকে ছিল।
স্রোত ও নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। দূর থেকে দেখলে কচুরিপানা, আগাছায় ভরা নদী দেখে বদ্ধ জলাশয় মনে হবে। এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল, নদী সংস্কার হলে আবার জোয়ার-ভাটা খেলবে এখানে। ঘুরে বেড়াবে পাল তোলা পানসি। বছর কুড়ি আগেও নদী ছিল স্রোতস্বিনী। বহু মৎস্যজীবী এই নদী থেকে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। চাষিরা সেচের কাজে লাগাতেন জল। সন্ধ্যায় মাঝিরা নদী বক্ষে নৌকা চালাতে চালাতে ভাটিয়ালি গান গাইতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতয়াতের অন্যতম মাধ্যমও ছিল জলপথ। কিন্তু সে সব এখন অতীত। সংস্কারের পরে আবার সেই পরিবেশ ফিরবে বলে আশা বাসিন্দাদের।
ছয়ঘড়িয়ার পঞ্চায়েত প্রধান জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদী সংস্কারের দাবি আমরা দীর্ঘ দিন ধরে করছিলাম। হরিদাসপুর থেকে ররিবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে।’’ সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হতে পারত। কিন্তু সে সময়ে নদীতে কচুরিপানা বেশি থাকায় তা পরিষ্কার করতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে।
বনগাঁ মহকুমার ভিড়ে গ্রামের কাঁটাখাল থেকে হরিদাসপুর-নরহরিপুর, খলিতপুরের মধ্যে দিয়ে নাওভাঙা পেট্রাপোল-পিরোজপুর বাওড়ে পড়েছে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা বালি খালের মাধ্যমে ইছামতী নদীতে গিয়ে মিশেছে নাওভাঙা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীটি ১৪ কিলোমিটার লম্বা। অতীতে সারা বছর জল থাকত। গভীরতা থাকত প্রায় ২০ ফুটের মতো।
নদীটি চাষিদের কাছে এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার অন্যতম কারণ, নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া। ফি বছর দুর্গাপুজোর আগের বৃষ্টিতে ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তৃর্ণ কৃষিজমি জলের তলায় চলে যায়। জল সরতে মাস চারেক সময় লেগে যায়। বহু জমি এখন নদীর কারণে একফসলিতে পরিণত হয়েছে। নদী সংস্কার হলে খেত আর জলে ডুববে না বলেও মনে করছেন চাষিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy