স্কুল: কত দিন চলবে ঠিকঠাক, ঘিরে ধরছে অনিশ্চয়তা। নিজস্ব চিত্র
স্থায়ী শিক্ষিকা নেই। কার্যত এই কারণেই উঠে যেতে বসেছে সাগরের মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যানিকেতন। স্কুলের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষিকা সম্প্রতি বদলির অনুমোদন পেয়ে গিয়েছেন হাইকোর্টে মামলা করে। তবে এখনও তাঁকে ছাড়েনি পরিচালন সমিতি। জেলা স্কুল পরিদর্শক তা কয়েক দিনের জন্য পিছিয়ে দিতে ফের আবেদন জানাচ্ছেন আদালতে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক বাদল পাত্র বলেন, ‘‘আমরা যেহেতু ওই স্কুলটিতে স্থায়ী শিক্ষিকা দিতে পারছি না, তাই অন্য স্কুল থেকে একজন পার্শ্বশিক্ষক আনা হয়েছে। চেষ্টা করছি, একজন স্থায়ী শিক্ষিকাকে বদলি করে আনানোর। তত দিন যাতে একমাত্র ওই শিক্ষিকা স্কুলে থাকেন, আদালতের কাছে সেই আবেদন করছি।’’
চার দশকের ওই স্কুলটি ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত হয়। ছাত্রী সংখ্যা এখন ৬৪ জন। এ বছর স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে ১০ জন। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক না থাকলে আগামী দিনে স্কুল চালানো মুশকিল বলে মনে করছে পরিচালন সমিতি। গত সাত বছরে স্কুল থেকে তিনজন স্থায়ী শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নতুন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বিশেষ কারণ দেখিয়ে গত বছর বদলি হয়ে যান আরও একজন। স্কুলটি এত দিন একজন স্থায়ী শিক্ষিকাই চালাতেন।
স্কুলের একমাত্র ওই স্থায়ী শিক্ষিকা আলোলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ‘মানবিক কারণে’ ২০১৬ সালে বদলির জন্য ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বদলির অব্যাহতির চিঠি (রিলিজ লেটার) না দেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। আদালতের রায়ে অবিলম্বে অব্যাহতি দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। আলোলিকার কথায়, ‘‘আমি সাত বছর একা স্কুল চালিয়েছি। আমার এগারো মাসের বাচ্চা এখন অসুস্থ। আমি নিজেও অসুস্থ। স্থায়ী শিক্ষিকা পাঠানো এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’’ ওই শিক্ষিকাকে ছাড়া না হলে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলে শিক্ষিকার আইনজীবী পরিচালন সমিতিকে চিঠিও পাঠিয়েছে।
বর্তমানে একজন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। বাকি আরও ১০ জন অস্থায়ী শিক্ষককে এক-দেড় হাজার টাকা মাইনে দিয়ে কোনও রকমে স্কুল চালাচ্ছে ম্যানেজিং কমিটি। স্কুলের সভাপতি অজিত সাহু নিজেও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘একমাত্র শিক্ষিকাকে ছেড়ে দিলে তো স্কুল উঠে যাবে। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থায়ী শিক্ষক ছাড়া চলবে কী ভাবে? অথচ সে জন্যই আমাকে এখন আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হচ্ছে।’’
কয়েক বছর আগেও স্কুলে ২৫০ জন ছাত্রী ছিল। এখন তা তলানিতে। মৃত্যুঞ্জননগরের বাসিন্দা স্বপন মাইতি গত বছর তাঁর মেয়েকে নবম শ্রেণি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে ভর্তি করেছেন স্থায়ী শিক্ষিকা না থাকার জন্যই। গত দেড় বছরে কেন মেয়েদের ওই স্কুলে কোনও স্থায়ী শিক্ষককে এই স্কুলে আনা যায়নি, প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy