Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিকে লাগাম হাবরায়

শুরুটা হয় ১ জানুয়ারি থেকেই। পুরসভা তার অনেক আগে থেকেই মাইকে প্রচার করেছে, লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেছে, পয়লা জানুয়ারি থেকে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

শুধু ঢ্যাঁড়া পিটিয়েই কাজ হয় না, সাধারণ মানুষের সহযোগিতাও যে দরকার, প্রমাণ করল হাবরা।

আর তাই কাপড়-কাগজের ব্যাগের জন্য ক্রেতারা এখন হাসিমুখে ২-৪ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে মালপত্র কিনছেন। অনেকে পকেটে করে থলি নিয়ে বেরোচ্ছেন দোকানে-বাজারে। পুরসভার লাগাতার প্রচার, আইনি পদক্ষেপ করার হুমকির পাশাপাশি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় হাবরা শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার এক ধাক্কায় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

শুরুটা হয় ১ জানুয়ারি থেকেই। পুরসভা তার অনেক আগে থেকেই মাইকে প্রচার করেছে, লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেছে, পয়লা জানুয়ারি থেকে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের প্রচার বহু পুরসভা এর আগেও করেছে, করে থাকে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলে কতটা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

কিন্তু হাবরায় ছবিটা গত কয়েক দিনে আমূল বদলে গিয়েছে।

বড়বাজারে গিয়ে চোখে পড়ল সেই দৃশ্য। আনাজ বিক্রেতা শিবু কুণ্ডুর কাছ থেকে সিম, বাঁধাকপি ফুলকপি, শাক কিনলেন এক ক্রেতা। টাকা মেটানোর সময়ে শিবুবাবু ওই ক্রেতার কাছ থেকে আরও ৪ টাকা চেয়ে নিলেন। ক্রেতাও বিনা বাক্যব্যয়ে টাকা বের করে দিলেন। বিনিময়ে মিলল কাপড়ের থলি।

হাবরা শহরের বড় বাজার, মুদির দোকান থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে এটাই এখন পরিচিত ছবি। প্লাস্টিকের ব্যাগ, পলিথিনের ব্যবহার কার্যত কোথাও দেখা যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে তো নয়ই। পুর কর্তৃপক্ষেরও দাবি, শহর এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে পুরসভার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, ১ জানুয়ারি থেকে শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে মোটা টাকা জরিমানা হবে। গ্রেফতারও করা হতে পারে। কিন্তু এত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হল কেন বিষয়টি?

পরিবেশ রক্ষার জন্য প্লাস্টিক, থার্মোকলের ব্যবহার যে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, তা আজ আর কারও অজানা নয়। কিন্তু হাবরা পুরসভার হাতে বাড়তি যুক্তিও ছিল।

এ বার জ্বর-ডেঙ্গিতে হাবরা শহরে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ানোর কারণ বিশ্লেষণ করে হাবরা পুর কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে, মূলত প্লাস্টিক ও থার্মোকলের যথেচ্ছ ব্যবহার এর পিছনে একটা কারণ হিসাবে কাজ করছে। কেন? নিকাশি নালাগুলি প্লাস্টিক ও থার্মোকলে ভরে থাকে। তাতে নালা দিয়ে জল সরে না। থার্মোকলের ফেলে দেওয়া থালা-গ্লাসের ভিতরে মশার লার্ভা বাসা বাঁধে ব্যাপক হারে। এই পরিস্থিতিকে টনক নড়েছে শহরবাসীরও। যে কারণে পুরসভার পদক্ষেপ এত সাড়া ফেলতে পেরেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘মাইকে প্রচার, ৫০ হাজার লিফলেট বিলি ছাড়াও এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বার বার বৈঠক করা হয়েছে।’’

পুর এলাকায় থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে মাঠে সভা করে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানোর।’’ এত কিছুর ফল এখন মিলছে বলেই পুর কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। তবে মানুষ নিজে থেকে নড়ে না বসলে এত সাফল্য মিলত না বলেও মনে করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, কোনও দোকানি প্লাস্টিক ব্যবহার করলে তাঁকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। কোনও ক্রেতা ধরা পড়লে তাঁকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হবে। স্থানীয় হাটথুবা এলাকার বাসিন্দা রতন দেবনাথ বলেন, ‘‘পুরসভার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। পুরসভার উচিত, আরও কিছু দিন নজরদারি চালিয়ে যাওয়া। তা হলে কেউ গোপনেও প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারবে না।’’ আশেপাশের এলাকাতেও এমনটা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ এ বার যে ভাবে ছড়িয়েছিল তাতে মানুষ আতঙ্কিত। তাঁরা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Plastic awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE