অসহায়: থানায় যাওয়ার পথে বৃদ্ধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ঘর থেকে কাতর কণ্ঠে চিৎকার ভেসে আসছিল, ‘‘আমাকে বাঁচাও।’’
এ দিকে বাইরের দরজায় তালা। প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেন, ঘরে বৃদ্ধকে আটকে রাখা হয়েছে। কোথায় বাড়ির বাকিরা? জানা গেল, তাঁরা বৃদ্ধকে ঘরবন্দি করে বে়ড়াতে গিয়েছেন।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের গাড়ুলিয়ার রবীন্দ্রপল্লিতে এই ঘটনায় জানা গিয়েছে, তিন দিন বন্দি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ রায়। বৃহস্পতিবার তাঁকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর রবীন দাস। তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় ইছাপুর স্টিল ও মেটাল ফ্যাক্টরির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মীকে। নোয়াপাড়া থানার পুলিশ তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথবাবুর ছেলে সুধীরের গাড়ির ব্যবসা। তাঁর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করতে পারেনি পুলিশ বা পুর প্রশাসন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ছেলে-বৌমার কাছে থাকলেও নিজের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা ছেলের হাতে দিতেন রবীন্দ্রনাথবাবু। টাকার পরিমাণ বাড়ানো নিয়ে ছেলের সঙ্গে অশান্তি হত মাঝে মাঝে। অসুস্থও থাকেন রবীন্দ্রনাথবাবু। নিয়মিত ওষুধের খরচও ছিল। বাইরের খাবার খেতে পারতেন না। তাই মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও ছেলে-বৌমার সংসারেই থাকতে বাধ্য হচ্ছিলেন।
দিন কয়েক ধরে সামান্য জ্বর ছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছেন, তিন দিন আগে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটির পরে বউকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে যায় ছেলে। যাওয়ার সময়ে সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ঘরে থাকা খাবারই দু’দিন ধরে খেয়েছেন বৃদ্ধ। এক সময়ে সেই জোগান ফুরোয়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে খিদেয় ছটফট করছিলেন। তখনই চিৎকার করতে থাকেন।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালেই মশার চাষ
স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবীনবাবু খবর পেয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের খবর আগে দেখেছি। আমার এলাকায় এমন ঘটনায় নিজেই তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। সুধীরকে বারবার ফোন করলেও পাওয়া যায়নি। রবীন্দ্রনাথবাবুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
ক্ষিপ্ত পাড়া-পড়শিরা। গাড়ুলিয়ার পুরপ্রধান সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘অপদার্থ ছেলে, না হলে এ ভাবে বাবাকে কেউ কষ্ট দেয়! ফিরুক আগে। যা করার করব।’’
এ দিন পুলিশ ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে স্থানীয় ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার পর ফের বাড়ি পৌঁছে দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানার ওসি নিজেদের ফোন নম্বর দেন রবীন্দ্রনাথবাবুকে। তাঁর খাবারেরও ব্যবস্থা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশীরা।
রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘ছেলে বেড়াতে চলে গেল রাগ করে। আমি তো বাবা। আমি রাগ পুষে রেখে কী করব। এত মানুষ আমার সঙ্গে আছেন, এটাও তো দেখলাম। ছেলে ভালয় ভালয় ফিরুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy