Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আত্মীয়দেরও সিমকার্ড বদলে দেয় বিশ্বনাথ

ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বনাথ তার বাড়িতে তুলে নিয়ে নরেশ হালদারকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখে বলে অভিযোগ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার পরে ২০ ফেব্রুয়ারি নরেশ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মারা যান। তারপর থেকেই গা ঢাকা দেয় বিশ্বনাথ।

আদালতের-পথে: বিশ্বনাথ পাত্র। নিজস্ব চিত্র

আদালতের-পথে: বিশ্বনাথ পাত্র। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০১:৪৫
Share: Save:

অপরাধের মাথা পাকা। পুলিশ কোন পথে যেতে পারে, হিসেব আগেই কষে নিয়ে পদক্ষেপ করত বিশ্বনাথ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সামান্য একটা ভুল থেকেই ধরা পড়ল বাপুজি অঞ্চলের প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাত্র। প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে জালে এনেছে সুন্দরবন পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং পর্ণশ্রী থানা। বিশ্বনাথের আত্মগোপন করে থাকার কায়দায় তদন্তকারীরাও তাজ্জব।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বনাথ তার বাড়িতে তুলে নিয়ে নরেশ হালদারকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখে বলে অভিযোগ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার পরে ২০ ফেব্রুয়ারি নরেশ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মারা যান। তারপর থেকেই গা ঢাকা দেয় বিশ্বনাথ। ২০১৬ সালে নরোত্তম মণ্ডল খুন হওয়ার পরেও একই ভাবে পালিয়ে গিয়েছিল সে। পুলিশ কী ভাবে পিছু নিতে পারে, তার ধারণা ছিল বিশ্বনাথের।

সু‌ন্দরবন পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের কর্তারা জানাচ্ছেন, এলাকা ছাড়ার সময়েই তার পরিবারকে বেহালার একটি ভাড়া বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় সে। বিশ্বনাথ নিজে চলে যায় হলদিয়ার দিকে। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে, জামাই-সহ পরিবার এবং সাগরেদদের সবগুলি ফোন এবং সিমকার্ড বদলে ফেলে রাতারাতি। ফলে পুলিশের কাছে বিশ্বনাথের হদিস করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, হলদিয়ার দিকে পুলিশ পা বাড়াতেই লেক গার্ডেন্সের একটি পাঁচতারা হোটেলের রাঁধুনির সঙ্গে ভিড়ে যায় বিশ্বনাথ। কুলপির ওই রাঁধুনি তার পূর্বপরিচিত। ওই হোটেলে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আশ্রয় নেয় বিশ্বনাথ। কিছু দিন চলে এ ভাবেই। তারপর বেহালার ভাড়া বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে গিয়ে ওঠে সে।

পুলিশ জানতে পারে, বিশ্বনাথের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের ফোন থেকে নিয়মিত ভাবে একটি নতুন নম্বরে ফোন যাচ্ছিল। পুলিশ সেটিকে নজরে আনে। সেখানকার কথোপকথনের হদিস করে বেহালার পর্ণশ্রীর কাছে বিশ্বনাথের হদিস মেলে।

বিশ্বনাথের নতুন ফোন নম্বর পেয়ে যায় পুলিশ। টাওয়ারের লোকেশন দেখা যায়, সন্ধে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সেটি বাড়ির পাশের একটি মাঠে ঘোরাফেরা করে। নজরদারি শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তা-ও সুরাহা হচ্ছিল না। কারণ সঠিক ঠিকানা না জানলে পাড়ায় গিয়ে অচেনা বাড়িতে ঢুকলে মুহূর্তের মধ্যেই সজাগ হয়ে যেতে পারত বিশ্বনাথ।

শুরু হয় পুলিশের ধৈর্যের পরীক্ষা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে একদিন বিশ্বনাথ নিজের নতুন নম্বর থেকে কেব‌্ল অপারেটরকে ফোন করে বসে। খেলা দেখতে পারছিল না টিভিতে, সে কথা জানানোর ছিল তার। ওই কলটি পুলিশের সামনে সুযোগ করে দেয়। কেব‌্ল অপারেটরের লোক বলে পরিচয় দিয়ে পাল্টা ফোন করে পুলিশই। ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। ফাঁদে পা দেয় বিশ্বনাথ।

পুলিশ একই সঙ্গে তার ভাড়া বাড়ি এবং বাড়ির পিছনের একটি মাঠে অভিযান চালায়। মঙ্গলবার সন্ধের পরে বাড়ির পিছনের ওই মাঠ থেকেই বিশ্বনাথ ধরা পড়ে যায়। তার দুই ছায়াসঙ্গীরও খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE