Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বারুইপুরে নামল র‌্যাফ

অবরোধে বন্ধ ট্রেন, চরমে যাত্রী হয়রানি

স্থানীয় সূত্রের খবর, রেললাইন লাগোয়া বস্তি এলাকায় বেআইনি শৌচালয় ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে বিকেল চারটে নাগাদ অবরোধে নামেন স্থানীয় কয়েক জন।

বিপর্যস্ত: রেললাইন আটকে বিক্ষোভকারীরা।—নিজস্ব চিত্র

বিপর্যস্ত: রেললাইন আটকে বিক্ষোভকারীরা।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

কয়েক জনের বয়স ১৩-১৪ এবং বাকিরা বড়জোর ২০-২২ বছরের। এমনই কিছু বিক্ষোভকারীর অবরোধে রীতিমতো বিপর্যস্ত হল ট্রেন পরিষেবা। সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলা সেই গোলমালে মাঝপথে আটকে চরম দুর্ভোগে পড়লেন হাজার হাজার নিত্য যাত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহ ডিভিশনের বারুইপুর ও মল্লিকপুর স্টেশনের মাঝে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রেললাইন লাগোয়া বস্তি এলাকায় বেআইনি শৌচালয় ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে বিকেল চারটে নাগাদ অবরোধে নামেন স্থানীয় কয়েক জন। কিছুক্ষণেই তা বড় আকার নেয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় স্টেশনে ভাঙচুর। তাদের থামাতে গেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্টেশন মাস্টারের ঘরের সামনে। সঙ্গে বাইরে সমানে চলে পাথর-বৃষ্টি। রেল সূত্রের দাবি, মারমুখী বিক্ষোভকারীদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। শেষে র‌্যাফ নামিয়ে রাত ন’টা নাগাদ অবরোধ তোলা হয়। এ দিকে, টানা কয়েক ঘণ্টা ট্রেন না পেয়ে হয়রানির প্রতিবাদে সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে অবরোধ শুরু করেন যাত্রীরা। রাতে ট্রেন চালু হলে ওঠে সেই অবরোধও।

পূর্ব রেল সূত্রের খবর, এ দিন রেলকর্মীরা আরপিএফের সহযোগিতায় লাইনের দু’পাশে থাকা কিছু বেআইনি জবরদখল তুলতে যান। আরপিএফের তরফে বারুইপুর রেললাইন ধারে ১৩টি শৌচালয় ভেঙে দেওয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। শৌচালয় পুনর্নির্মাণ ও রেল কর্তৃপক্ষের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে ওই অবরোধ শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ আরপিএফ কর্তাদের ঘেরাও করেও রাখা হয়। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ আরপিএফ কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হলেও চলতে থাকে রেল অবরোধ।

শিয়ালদহ স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীরা। সোমবার সন্ধ্যায়।

রেল সূত্রের অবশ্য দাবি, শিয়ালদহ উত্তর থেকে দক্ষিণের সব স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকায় বেআইনি দখলদারদের বাড়বাড়ন্ত। সব প্ল্যাটফর্মই অনেকটা করে ছোট হয়ে গিয়েছে বেআইনি স্টলে। ইদানীং লাইনের দু’পাশও দখল হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে মেরামতিও করতে পারছেন না কর্মীরা। রেলকর্তাদের অভিযোগ, এর পিছনে আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়। যে দলই ক্ষমতায় আসে, দখলদারেরা তাদের পতাকা নিয়ে জবরদখল করে সেখানে টাঙিয়ে দেয়। বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই এলাকার সব বস্তিতে শতাধিক পরিবার আছে। কেন্দ্রীয় সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। সে ক্ষেত্রে বিনা নোটিসে এমন ভাবে শৌচালয় ভেঙে দেওয়া অনৈতিক বলে মনে করি।’’

রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যে নির্মাণগুলি ভাঙতে গিয়েছিলেন রক্ষীরা, সেগুলি থাকলে রেলের মেরামতির কাজে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার সব্যসাচী রমনমিশ্র বলেন, ‘‘সুষ্ঠুভাবে ট্রেন চালানোর জন্যই রেলকর্মীরা জবরদখল ভাঙতে গিয়েছিলেন। তাতেই হয়রানি বাড়ল।’’ রেল সূত্রের খবর, এ দিন অবরোধের জেরে বাতিল করতে হয়েছে ৩৫টি ট্রেন। অনেক রাতেও ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘শিয়ালদহ দক্ষিণের লক্ষ্মীকান্তপুর, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে হাজার হাজার যাত্রী আটকে পড়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE