Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাথরুমে আটকে রেখে গায়ে আগুন

তাঁর বক্তব্য, বাথরুমে ঢুকিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে স্বামী। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। বাবা-মাকেও দরজা বন্ধ করে রেখে ছিল। তাঁরা কোনও মতে বেরিয়ে বৌমাকে উদ্ধার করেন। মহিলার জবানবন্দি নথিবদ্ধ করে উত্তমের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

যন্ত্রণা: হাসপাতালে আহ্লাদি। ইনসেটে উত্তম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

যন্ত্রণা: হাসপাতালে আহ্লাদি। ইনসেটে উত্তম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:১৬
Share: Save:

মহিলার আর্তনাদ শুনে বেরিয়ে আসেন আশেপাশের বাড়ির লোকজন।

বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। বাড়ির পাশে ঢালাই রাস্তার উপরে শুয়ে ছটফট করছিলেন আহ্লাদি টিকাদার। শাড়ির আগুন তখনও নেভেনি।

প্রতিবেশী দুই মহিলা কাঁথা এনে আহ্লাদির শরীর মুড়ে দেন। জল ঢালা হয়। কোনও মতে আগুন নেভে। যদিও ততক্ষণে মহিলার শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঝলসে গিয়েছে। শীলা বিশ্বাস ও সন্ধ্যা গোলদার নামে পড়শি দুই মহিলাই টোটো ডেকে আহ্লাদিকে নিয়ে গিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান।

আহ্লাদি থাকেন বনগাঁ থানার খ্রিস্টানপাড়ায়। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাত বলেন, ‘‘মহিলার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।’’ বৃহস্পতিবার রাতেই বছর বত্রিশের আহ্লাদিকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যেতে পারেননি। আহ্লাদির শ্বশুর চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমি বৃদ্ধ মানুষ। একা, অসহায়। টাকা-পয়সাও বেশি নেই। আমি কী ভাবে কলকাতায় চিকিৎসা করাব?’’

কিন্তু কী ভাবে পুড়ে গেলেন মহিলা?

এই ঘটনায় স্বামী উত্তমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন আহ্লাদি। তাঁর বক্তব্য, বাথরুমে ঢুকিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে স্বামী। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। বাবা-মাকেও দরজা বন্ধ করে রেখে ছিল। তাঁরা কোনও মতে বেরিয়ে বৌমাকে উদ্ধার করেন। মহিলার জবানবন্দি নথিবদ্ধ করে উত্তমের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

উত্তম আগে দিনভর মাদকের নেশায় চুর হয়ে থাকত। ইদানীং চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নয় সে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছিল টিকাদার বাড়ি থেকে। আহ্লাদি বলেন, ‘‘হাত থেকে আধ লিটার দুধ চলকে পড়ে গিয়েছিল। তা নিয়েই অশান্তির শুরু। আমাকে মারধর করে স্বামী।’’ তখনকার মতো গোলমাল থামলেও উত্তমের রাগ নামেনি। আহ্লাদির অভিযোগ, ‘‘রাতের দিকে ফের চিৎকার শুরু করে স্বামী। আমাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দেয়। তারপরে আগুন ধরিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালায়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে উত্তমের সঙ্গে বিয়ে হয় আহ্লাদির। আহ্লাদির প্রথম পক্ষের বিয়ে আছে। সেই পক্ষের তিন সন্তান। সেই সন্তানেরা আহ্লাদির সঙ্গে থাকে না। পুলিশ জানতে পেরেছে, উলুবেড়িয়ায় আহ্লাদির বাপের বাড়ি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, তাঁকেই আকুল হয়ে আহ্লাদি জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘আমি বাঁচব তো? আমার তো সন্তান রয়েছে। ওদের জন্য বাঁচতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burnt House Wife Torture bathroom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE