Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দিদিকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার বোন

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের বোনের হাতে মার খেতেন নিমতার প্রায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা শিখা সরকার। ঘরের ভিতরের থেকে তাঁর আর্তনাদ শুনতেন আশপাশের বাসিন্দারা।

আশ্বস্ত: নিজের বাড়িতে শিখাদেবী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

আশ্বস্ত: নিজের বাড়িতে শিখাদেবী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

মাঝে মধ্যেই পাশে এসে দাঁড়ানো প্রতিবেশীদের হাতটা আঁকড়ে ধরছেন তিনি। একটু হেসে জানতে চাইছেন, আর কেউ মারবে না তো!’’

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের বোনের হাতে মার খেতেন নিমতার প্রায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা শিখা সরকার। ঘরের ভিতরের থেকে তাঁর আর্তনাদ শুনতেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁদেরই বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে সামনে এসেছে অন্দরের এই অত্যাচারের কাহিনি। আর তার পরেই রবিবার ভোরে নিমতা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে শিখাদেবীর বোন রীতা সাহাকে। পলাতক রীতাদেবীর পরিবারের অন্য সদস্যেরা। এ বার তাই খানিকটা আশ্বস্ত বৃদ্ধার মুখে হাসি দেখলেন প্রতিবেশীরা।

সম্পত্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শিখাদেবীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল রীতাদেবী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণ করতে স্থানীয় বাসিন্দারা গোপনে মারধরের ভিডিও তুলে রাখেন। এর পরেই প্রমাণ-সহ স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। শনিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে শিখাদেবীর বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই নজর রাখছেন বৃদ্ধার উপরে। বাসিন্দা অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘‘শিখাপিসির জন্য দুপুরে ভাত, ডাল, মাছের ঝোল পাঠিয়েছেন প্রতিবেশীরাই। বহু দিন পরে যেন খুব তৃপ্তি করে খেয়েছেন সে সব।’’ সকালে প্রতিবেশীরা বৃদ্ধাকে স্নান করিয়ে গরম জামা পরিয়ে দিয়েছেন। এ দিন বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, গায়ে কম্বল দিয়ে শুয়ে রয়েছেন শিখাদেবী। লোক দেখলেই উঠে বসছেন তিনি।

সন্ধ্যায় বৃদ্ধাকে দেখতে যান মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং উত্তর দমদমের তৃণমূল সভাপতি তথা পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিধান বিশ্বাস। আবার বোন মারবে বলে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিখাদেবী। বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন ‘‘ওঁর এখনও আতঙ্ক রয়েছে। ওঁকে বলেছি, বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু এমন নির্মম ভাবে যে কেউ কাউকে মারতে পারেন, সেটা ভাবা যায় না।’’

বিধানবাবু জানান, শনিবার ঘটনাটা শোনার পর থেকেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের কয়েক দফায় পাঠানো হয়েছিল বৃদ্ধার বাড়িতে। সকলে মিলে উদ্যোগী হয়ে বৃদ্ধার বাড়িতে চিকিৎসক নিয়ে যান। প্রতিবেশীরা জানান, শিখাদেবীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি মানসিক ও শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ। তবে ঠিক মতো পরিচর্যা করলে এবং চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন শিখাদেবী।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাশের পাড়ায় থাকেন শিখাদেবীর অন্য বোন মিতাদেবী। অসুস্থ বৃদ্ধার নিয়মিত দেখভালের প্রয়োজন। তাই বাসিন্দারা মনে করছেন, বোনের কাছেই থাকা উচিৎ বৃদ্ধার। মন্ত্রী জানান, মিতাদেবীর বাড়িতে জায়গা না হলে, তাঁর বাড়ির পাশে কোনও জায়গায় রাজ্য সরকার গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ঘর তৈরি করে দেবে। পাশাপাশি মন্ত্রী বলেন, ‘‘শিখাদেবীর আজীবন চিকিৎসা এবং খাওয়ার দায়িত্ব বহন করবে উত্তর দমদম পুরসভা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE