Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অভিমানী পরিচালকের নামে রাস্তা চায় কাইগ্রাম

পদ্মশ্রী জয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক দেবকীকুমার বসুর নামে রাস্তার নামকরণের দাবি উঠল মন্তেশ্বরে। মামুদপুর ২ পঞ্চায়েতের কাইগ্রাম ও সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবি তুলছিলেন। সম্প্রতি জেলা পরিষদে চিঠিও দেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের দাবি, মন্তেশ্বরের সোনাডাঙা বাজার থেকে কাইগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তার নাম দেবকীকুমার বসুর নামে করতে হবে।

উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে দেবকীবাবু। পুরনো অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত।

উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে দেবকীবাবু। পুরনো অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২২
Share: Save:

পদ্মশ্রী জয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক দেবকীকুমার বসুর নামে রাস্তার নামকরণের দাবি উঠল মন্তেশ্বরে। মামুদপুর ২ পঞ্চায়েতের কাইগ্রাম ও সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবি তুলছিলেন। সম্প্রতি জেলা পরিষদে চিঠিও দেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের দাবি, মন্তেশ্বরের সোনাডাঙা বাজার থেকে কাইগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তার নাম দেবকীকুমার বসুর নামে করতে হবে। একই সঙ্গে কাইগ্রামে দেবকীকুমারের পৈত্রিক ভিটের সামনে ফলক বসানোরও দাবি করেছেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে বর্ধমান জেলা পরিষদও।

মন্তেশ্বরের কাইগ্রামে বাড়ি হলেও দেবকীবাবুর জন্ম হয়েছিল তাঁর মামারবাড়ি মন্তেশ্বরেরই অকালপৌষ গ্রামে। দেবকীকুমারবাবু অবশ্য বিভিন্ন সময়ে অকালপৌষকেই তাঁর জন্মস্থান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দেবকীবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় অনেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি মানতে পারেননি। নানা কারণে অপমানিত হতেও হয় তাঁকে। সেই অভিমান থেকেই হয়ত নিজের বাড়ি বলতে মামার বাড়িকেই বোঝাতেন তিনি। রাস্তার নাম দেবকীবাবুর নামে করার অন্যতম উদ্যেক্তা হলেন কাইগ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ মানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “দেবকীবাবুর পুত্র দেবকুমার বসু আমাদের বলেছিলেন, জমিদার বাড়ির ছেলে হয়েও চলচ্চিত্র শিল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিবারের অনেকে তাঁকে কুলাঙ্গার বলতেন। তাই হয়ত দেবকীকুমার নিজের জন্মস্থান হিসেবে অকালপৌষের নাম বলতেন। রাস্তার নামকরণের মধ্যে দিয়ে এই কলঙ্কই মুছতে চায় কাইগ্রামের মানুষ।”

জেলা পরিষদে তাঁদের দাবি জানানোর সঙ্গেই দেবকীকুমার বসুর জীবনী যোগ করে দিয়েছেন কাইগ্রামের বাসিন্দারা। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, ১৮৯৮ সালের ২৫ নভেম্বর জন্ম হয় মধুসূদন বসু ও গোপীসুন্দরী দেবীর সন্তান দেবকীকুমারের। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম মুখপত্র শক্তিপত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন তাঁর বন্ধু। দেবকীবাবুর প্রাপ্য পুরস্কারের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘সীতা’ পরিচালনার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। ১৯৫৮ সালে পদ্মশ্রী সম্মান পান তিনি। পরের বছর তাঁর পরিচালিত ছবি ‘সাগরসঙ্গমে’ রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পায়। দেবকীবাবুই ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার করেছিলেন বলেও তাঁর পরিবারের দাবি।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “বর্ধমান জেলায় অনেক কৃতী মানুষ জন্মেছেন। আমাদের উচিত তাঁদের সম্মান জানানো। কাইগ্রামের মানুষের ওই দাবি পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta bardwan debaki kumar basu kaigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE