Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্র ছেড়ে শান্তির বার্তা মণ্ডপে

টানা ১০০ বছর যুদ্ধ করেও অসুরদের হাতে হেরে গিয়েছিলেন দেবতারা। তারপর থেকে মর্ত্যে দেবতাদের পুজো বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ভাবে দেবতাদের লাঞ্ছনা করাই অসুরদের কাজ হয়ে গিয়েছিল। দেবতাদের লাঞ্ছনামুক্তির সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তাঁদের শরীর থেকে নির্গত তেজপুঞ্জে মিশে গিয়েছিল অন্য দেবতাদের তেজরাশি।

খালুইবিলুই মাঠের মণ্ডপে অন্য সাজে দুর্গা। নিজস্ব চিত্র।

খালুইবিলুই মাঠের মণ্ডপে অন্য সাজে দুর্গা। নিজস্ব চিত্র।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

টানা ১০০ বছর যুদ্ধ করেও অসুরদের হাতে হেরে গিয়েছিলেন দেবতারা। তারপর থেকে মর্ত্যে দেবতাদের পুজো বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ভাবে দেবতাদের লাঞ্ছনা করাই অসুরদের কাজ হয়ে গিয়েছিল। দেবতাদের লাঞ্ছনামুক্তির সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তাঁদের শরীর থেকে নির্গত তেজপুঞ্জে মিশে গিয়েছিল অন্য দেবতাদের তেজরাশি। সৃষ্টি হয়েছিল এক মহাতেজস্বিনী নারীর। তিনিই দুর্গা। সেই মাতৃশক্তির হাতে নানা অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবতারা। তাতে বলীয়ান হয়েই দেবী বধ করেছিলেন মহিষাসুরকে। বিনাশ হয়েছিল অশুভ শক্তির।

কিন্তু এই ভাবনার সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে অস্ত্র ছাড়াই প্রতিমা সাজিয়েছে বর্ধমানের খালুইবিলুই মাঠ গুডশেড রোড সর্বজনীন। দুর্গা, মহিষাসুর কারও হাতে অস্ত্র না ধরিয়ে বিশ্বশান্তির থিমে হেঁটেছে তারা। প্রতি বছরই জিটি রোডের এক পাশের এই পুজো মানুষকে সমস্যায় না ফেলে ছোট জায়গায় সুন্দর থিমের মণ্ডপ গড়ে। এ বারও মণ্ডপে ঢুকতেই চোখে পড়বে গাজায় আছড়ে পড়ছে ইসরাইলি ক্ষেপনাস্ত্র। রাস্তার পাশে শিশুকোলে কাঁদছেন মা। তাঁর স্বামীর দেহ পড়ে রয়েছে অদূরে। আর মণ্ডপের ভেতরে অস্ত্রশূন্য হাতে বরাভয় দিচ্ছেন দেবী। বিশ্বশান্তির থিমের দুই শিল্পী অপূর্ব নন্দী ও পার্থসারথী মণ্ডলের কথায়, “দেবীদের কারও হাতেই অস্ত্র থাকছে না। উল্টে দুর্গার কোলে থাকছে এক মানবশিশু। তার হাতে পদ্মফুল, সেই পদ্মফুল সে তুলে দিচ্ছে মহিষাসুরের হাতে। সেই ফুলের ডালা হাতে নিয়েই হিংসা ছেড়ে মহিষাসুর চলে যাচ্ছে পাতালে।”

শহরের লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘের থিমও এ বার বিশ্বশান্তি। মণ্ডপের ঢোকার মুখেই বিশাল পিতলের রঙের কারুকার্যখচিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। মণ্ডপের ভেতরেও তাঁর অগণিত প্রতিকৃতি। আর দুর্গা দশ নয় সহস্রভুজা। সেই হাজার হাতে তিনি মানুষের রক্তপাত রুখে অভাব মেটাচ্ছেন, এমনটাই জানালেন পুজো কমিটির কর্তা তন্ময় সামন্ত।

থিমে বিশ্বশান্তি, অভাব মেটানো ছাড়া সরাসরি আসরে নেমেও অনেক সংস্থা শিশু, বয়স্কদের পুজোর দিনগুলি আনন্দে ভরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। বড়নীলপুরের শিশু বিকাশ কেন্দ্রেও এ বার দুর্গাপুজো হচ্ছে। ওই কেন্দ্রের ৫১ জন আবাসিককের জন্য পুজোর চারদিনই খাওয়া-দাওয়া, গানবাজনার আয়োজন করছেন সমাজসেবী সাবা মির্জা। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হবে। সাবা বলেন, “ প্রতি বারই এখানকার আবাসিকদের ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বার সকলের ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে, কেন্দ্রের ভেতরেই দুর্গাপুজো করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta durga pujo bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE