শিকড়-ছেঁড়া: ঝ়ড়ের চোটে কালনায় স্কুলের উপর উপড়ে পড়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখীর পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু তার পরেও লন্ডভন্ড পূর্ব বর্ধমানের অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। সব থেকে খারাপ হাল বিদ্যুৎ সংযোগের। জেলার নানা প্রান্তে ‘সজল ধারা’ প্রকল্প থেকে পানীয় জলও মিলছে না বলে দাবি বাসিন্দাদের। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখনও ঠিক হয়নি। আশা করছি, খুব দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
সোমবার ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে হাত দিয়ে প্রাণ হারালেন বর্ধমানের গুমুরি গ্রামের নজরুল হক (৬২)। তাঁর পরিবারের দাবি, রবিবার রাতে ঝড়-জলের পর বাড়িঘর অপরিষ্কার হয়ে পড়েছিল। সোমবার জঞ্জাল ফেলতে গিয়ে ছেঁড়া তারে হাত দিয়ে ফেলেন নজরুলবাবু। বর্ধমান মেডিক্যালে আনা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান তাঁকে।
প্রশাসনের সূত্রে খবর, বিদ্যুতের তারের উপরে বহু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। মন্তেশ্বর, সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামে নষ্ট হয়ে গিয়েছে চারটি ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশন। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘রাতভর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়নি। নানা জায়গায় গাছ কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’’ কালনায় অন্তত ২০০টি খুঁটি ভেঙে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তবে মঙ্গলবার থেকে প্রতিটি সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের কালনা ডিভিশন। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল, সরকারি দফতর-সহ বিভিন্ন জরুরি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে। বর্ধমান পুরসভা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ এলেও বাকি অংশ অন্ধকারেই রয়েছে। মঙ্গলবারও জলসরবরাহের বিঘ্ন ঘটেছে। অনেক গ্রামের চড়া দরে জেনারেটর ভাড়া করে পাম্প চালিয়ে জল সরবরাহ ঠিক রেখেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। টোটো চালকদের অভিযোগ, টোটোর ব্যাটারি চার্জ করার জন্য জেনারেটর ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি টাকা নিয়েছেন।
তবে এখনও কালনা মহকুমার অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছয়নি। যেমন কালনার বড়মিত্রপাড়া, হালদারবাগানে গিয়ে দেখা গিয়েছে প্রায় ২০০টি বাড়ি এখনও বিদ্যুৎহীন। এলাকার বাসিন্দা রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ভীষণ দুর্ভোগ হচ্ছে।’’ তা ছাড়া মহকুমার বহু গ্রামেই বিদ্যুৎ না থাকায় ‘সজল ধারা’ প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক মণ্ডলের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। পরিস্থিত পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।’’
এ দিন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্যের কাছে আর্জি জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “চাষিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, তার জন্য নবান্নে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে চাষে সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বর্ধমান সদরের দুটি মহকুমা। এই দুটি মহকুমায় ৩৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমির ধান সর্ম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কাটোয়া ও কালনাতে ১০০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে যথাক্রমে ২২ হাজার ১৪২ হেক্টর জমি ও ৩৬৩৭ হেক্টর জমির ধান। ব্লক স্তরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ভাতার। এখানে ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ঝড়ে গিয়েছে। জেলা বিপর্যয় মোকাবিল দফতরের আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার জানিয়েছেন, কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। ত্রাণ সরবরাহে কোনও ঘাটতি রাখা হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy