Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কোন্দল তৃণমূলে

ওয়ার্ডে বৈঠক, ডাকাই হল না কাউন্সিলরকে

পরপর দু’দিন। দলের ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচনী বৈঠকে ব্রাত্য রইলেন তৃণমূলের দেড় দশকের কাউন্সিলর! শাসক দলেরই একটি অংশের দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে গোষ্ঠী কোন্দলই!

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১২
Share: Save:

পরপর দু’দিন। দলের ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচনী বৈঠকে ব্রাত্য রইলেন তৃণমূলের দেড় দশকের কাউন্সিলর! শাসক দলেরই একটি অংশের দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে গোষ্ঠী কোন্দলই!

দেড় দশকেরও বেশি সময় দুর্গাপুর পুরসভার কাউন্সিলর পদে রয়েছেন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। প্রথম পাঁচ বছর কংগ্রেসের। শেষটা তৃণমূলের। কংগ্রেসের হয়ে পাঁচ বছর ও তৃণমূলের হয়ে দশ বছর পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। বুধবার সেই ওয়ার্ডে, বাড়ির অদূরে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের নির্বাচনী বৈঠকে ডাক পাননি বিশ্বনাথবাবু। সেখানে সভা করে আসেন দলের বর্তমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়, মেয়র-বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরা। বৃহস্পতিবার আবার নির্বাচনী বৈঠক হয় ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে। বিশ্বনাথবাবু তিন বছর ধরে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এ দিনও একই ভাবে তাঁকে ছাড়াই শেষ হল ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচনী বৈঠক।

বিশ্বনাথবাবু সোনামুখী কলেজে পড়ার সময় ছাত্র পরিষদ করতেন। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দুর্গাপুর পুরসভার প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী হন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। ২০০১ সালে তৃণমূলে যোগ ২০০২ সালে তৃণমূলের হয়ে লড়ে ২৩৫০ ভোটে হারান সিপিএম প্রাথী দেবব্রত সাঁইকে। ২০০৭ সালেও তিনি ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হন। দুর্গাপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন বিশ্বনাথবাবু। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষিত হওয়ায় ২০১২ সালে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। স্থানীয় নেতৃত্ব তাঁকে আর প্রার্থী করা হবে না বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে দুপুর একটা নাগাদ তিনি দলের রাজ্য স্তরের তিন নেতাকে ধরে মনোনয়ন জমা করেন। জিতেও যান।

বুধবার বিশ্বনাথবাবুর পাড়ায় একটি লজে তৃণমূলের ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচনী বৈঠক হয়। বিশ্বনাথবাবুর দাবি, বৈঠকে পুরনো তৃণমূল নেতা কর্মীরা কেউ আসেননি। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে আসা কিছু মানুষ এসেছিলেন। এমনও কয়েকজন এসেছিলেন যাঁদের গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের হয়ে খাটতে দেখা গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এ সব দেখেশুনে এলাকার সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা মিইয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘‘বিশুদা (বিশ্বনাথবাবু) এই ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার ফল ভাল হবে না!’’

বৈঠক আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের আইনজীবী সেলের নেতা দেবব্রত সাঁইকে। এই দেবব্রতই সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বনাথবাবুর কাছে হেরেছিলেন! তারই বদলা নিলেন নাকি? জবাব এড়িয়ে দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘নেতৃত্ব যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা পালন করেছি মাত্র। কে ডাক পেলেন, কে বৈঠকে এলেন তা নিয়ে ভাবছি না।’’ গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিশ্বনাথবাবুকে। তাঁর মত, ‘‘এ সব করে আখেরে দলের ক্ষতি করছেন হাতে গোনা কয়েকজন।’’

বিধানসভা ভোটের আগে নানা ঘটনায় এ ভাবে দলের কোন্দল সামনে আসছে কেন? জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধায়কের উদ্যোগে বৈঠক হচ্ছে।’’ মেয়র-বিধায়ক অপূর্ববাবুর সঙ্গে একসময় দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠতা ছিল বিশ্বনাথবাবুর। অপূর্ববাবু অবশ্য বলেন, ‘‘বৈঠকে সবাই স্বাগত ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE