Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলেজ নিয়েই দ্বন্দ্বে বাদশা-তারকেশ্বর

দু’জনেই তৃণমূল। একজন কলেজের টিচার-ইনচার্জ, অন্যজন কাউন্সিলর। দু’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক অভিযোগ বিরোধীদের। পুলিশের খাতায় অভিযোগও রয়েছে। দু’জনেই আবার একই পাড়ার বাসিন্দা।

থানার সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

থানার সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

দু’জনেই তৃণমূল। একজন কলেজের টিচার-ইনচার্জ, অন্যজন কাউন্সিলর। দু’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক অভিযোগ বিরোধীদের। পুলিশের খাতায় অভিযোগও রয়েছে। দু’জনেই আবার একই পাড়ার বাসিন্দা। সেই দু’জনেই জড়িয়ে পড়লেন গোলমালে। একজনকে চড় মারার অভিযোগ উঠল অন্যজনের বিরুদ্ধে।

প্রথম জন হলেন রাজ কলেজের টিচার-ইনচার্জ তারকেশ্বর মণ্ডল। যাঁর বাবুরবাগের বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরেই থাকেন দ্বিতীয় জন, তৃণমূলের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ বসির আহমেদ ওরফে বাদশা। শনিবার পিকনিক থেকে ফেরার পথে দু’জনে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। তারকেশ্বরবাবু বাদশার বিরুদ্ধে প্রথমে থানায় অভিযোগও করেন। পরে যদিও তিনি তা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু ওই ঘটনা উস্কে দিয়েছে বিরোধীদের। দু’জনের সম্পর্কেই এ দিন শহরময় নানা কথা শোনা গিয়েছে।

সিপিএমের এক নেতার কটাক্ষ, “দু’জনেই সমগুণ সম্পন্ন। দু’জনের মধ্যে মিল অনেক। আর কে না জানে, তৃণমূলে সমগুণ সম্পন্নরা এক সঙ্গে থাকতে পারেন না! এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শ্লীলতাহানির অভিযোগে তারকেশ্বরবাবু জেল খাটলেও, কাউন্সিলরকে জেলের ভিতর পা রাখতে হয়নি। ব্যতিক্রম বলতে এই টুকুই।’’

দু’জনেই এখন খবরের শিরোনামে। শনিবার দুপুরে রাস্তায় একা পেয়ে তারকেশ্বরবাবুকে বাদশা চড় মারেন বলে অভিযোগ। তার জেরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বাদশাকে বহিষ্কার করতে দেরি করেননি। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও দলের চাপে তারকেশ্বরবাবু তা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেন। যদিও কেন অভিযোগ তুলে নেওয়া হল, সে ব্যাপারে তারকেশ্বরবাবুর কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তারকেশ্বরবাবুকে ফোন করা হলে, এক যুবক ফোন ধরে বলেন, ‘‘স্যার, অসুস্থ। এখন কোনও কথা বলতে পারবেন না।’’ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, দলের রাজ্যস্তরের এক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফোনে তারকেশ্বরবাবুকে জানান, দল তো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তাহলে থানা-পুলিশ করার দরকার কী? এরপরেই তিনি লিখিত ভাবে তাঁর অভিযোগ তুলে নেন। যদিও চড় মারার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর।

কিন্তু এই দু’জনের মধ্যে যুযুধান অবস্থা হল কেন?

তারকেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “বহিরাগতদের নিয়ে কাউন্সিলর কলেজে আসবেন। তাতে বারবার বাধা দেওয়া হয়। সে কারণেই আমার উপর আক্রমণ।” কলেজ সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে কাউন্সিলরের অনুগামীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে তারকেশ্বরবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা মার খান কলেজের এক কর্মচারী। শনিবার সামনাসামনি দেখা হতেই তাই কাউন্সিলর নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেননি। যদিও ওই কাউন্সিলরের পাল্টা দাবি, “ঐতিহ্যবাহী রাজ কলেজকে দায়িত্ব নিয়ে শেষ করে দিচ্ছেন তারকেশ্বরবাবু। নিরাপত্তারক্ষীর নাম করে তিনি একের পর এক বহিরাগতদের কলেজে ঢোকাচ্ছেন। হিসেব করে দেখলে দেখা যাবে, ৫০-৬০ জনকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ভাবে সরকারি টাকা খরচ করার প্রতিবাদ করায় তিনি আমার নামে এ দিন মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।”

পুলিশ জানাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার অভিযোগ রয়েছে বাদশার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নিজের ওয়ার্ডের একটি পরিবারের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তারকেশ্বরবাবুর বাড়িতে ইতিপূর্বে হামলা চালানো, ভোট লুঠের মতো ঘটনার অভিযোগে নাম জড়িয়েছে ওই কাউন্সিলরের। কয়েক মাস আগে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেরই এক মহিলা তাঁকে নিজের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে বাদশার বিরুদ্ধে নবান্নতেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে বাদশাকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় বলে দল সূত্রে খবর। কিন্তু ফের শনিবারের ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ফের দলকে অস্বস্তির মুখে পড়তে হল।

তারকেশ্বরবাবুর বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজেরই এক শিক্ষিকাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিবিএ এবং বিসিএ বিভাগে এক ছাত্রীকে মারধর করাতেও তাঁর নাম জড়িয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, কোনও রকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কলেজের পরিচালন সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন তিনি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েও তাঁরা তারকেশ্বরবাবুকে বিঁধেছেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনুল হক বলেন, “দু’জনেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। কৃতীদের স্বার্থে সংঘাত লাগতেই এই অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।” তৃণমূলের কোনও নেতাই অবশ্য প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে দলের এক জেলা নেতা বলেন, “আমাদের কাছে দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই বারবার অভিযোগ এসেছে। কিন্তু আমরা কোনও দিনই কিছু বলিনি। কিন্তু এ দিন প্রকাশ্যে যা ঘটেছে তা খুবই নিন্দনীয়।” এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে বলেন, “পুরোটাই একটা নাটক আর তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল। তা ঘটনার পরম্পরা দেখলেই বোঝা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE