Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাউকে কাটল ইঁদুর, কেউ ধরাশায়ী মোটরবাইকে

চার জনের মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলের অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, কোনও না কোনও ঘটনার তদন্ত নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। সে কারণেই বর্ধমান জেলার চার ওসি-কে নির্বাচন কমিশন সরানোর নির্দেশ দিয়েছে বলে অনুমান পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একাংশের।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৮
Share: Save:

চার জনের মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলের অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, কোনও না কোনও ঘটনার তদন্ত নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। সে কারণেই বর্ধমান জেলার চার ওসি-কে নির্বাচন কমিশন সরানোর নির্দেশ দিয়েছে বলে অনুমান পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একাংশের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে রাজ্যের যে কুড়ি জন পুলিশ অফিসারকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মঙ্গলকোট, কাঁকসা, বারাবনি ও রানিগঞ্জ থানার ওসি। কমিশনের দাবি, বদলি হওয়া অফিসারদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে পর্যবেক্ষকেরা তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্তাদের থেকেও তারা একই রিপোর্ট পেয়েছেন।

গত নভেম্বরে মঙ্গলকোট থানায় এসেছিলেন ওসি সঞ্জয় কুণ্ডু। তাঁর বিরুদ্ধে গত চার মাসে কোনও রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেনি। তবে জেলা প্রশাসনের একাংশের অনুমান, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধীদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করার ঘটনায় ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ না নেওয়ার জন্যই ওসিকে নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়তে হল। জেলার অন্যতম ‘সিনিয়র’ ওসি সঞ্জয়বাবুকে আপাতত পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ মঙ্গলকোটের কৈচরে প্রচারে এসে বিরোধীদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে গর্তে চাপা দিয়ে বা ‘কীটনাশক’ দিয়ে মারার কথা বলেন অনুব্রতবাবু। পর দিন সিপিএম নির্বাচন কমিশনে অনুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ১২ মার্চ মঙ্গলকোটের বিডিও ‘প্ররোচনামূলক বক্তব্য’ ও নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের জন্য অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মঙ্গলকোট থানায়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ পেয়ে ওসি চিঠি দিয়ে বিডিও-র কাছে জানতে চান, কোন ধারায় পুলিশ মামলা রুজু করবে। বিডিও কোনও উত্তর না দেওয়ায় মঙ্গলকোট থানা একটি জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করে। পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পুলিশ অনুব্রতর বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিমূলক আইনে মামলা শুরু করে।

পুলিশ জানায়, জনপ্রতিনিধিমূলক আইনের ১২৫ ধারায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই আইন জামিনযোগ্য না অযোগ্য, তা পরিষ্কার নয়। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর। সাধারণত এ ধরনের মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান অভিযুক্তেরা। তাই এমন মামলাকে ‘জামিনযোগ্য’ বলে ধরে নেয় পুলিশ। কিন্তু প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ধারা জামিনযোগ্য না অযোগ্য, তা বিচার করবে আদালত। তাই এক্ষেত্রে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছে বলে নির্বাচন কমিশন মনে করেছে, অনুমান প্রশাসনিক মহলের। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মঙ্গলকোটের ওসি-র বিরুদ্ধে আমরা কমিশনে কোনও রিপোর্ট করিনি। কমিশন সম্ভবত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপরে ওসিকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।”

রানিগঞ্জের ওসি অর্ণব গুহর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে পক্ষপাতের অভিযোগ জানিয়েছিল বিজেপি। আসানসোলে দলীয় প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা ও জাতীয় সড়ক অবরোধ-সহ একাধিক ধারায় পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ওসি-র অপসারণ চেয়ে চিঠি দেয় বিজেপি। তবে বারাবনির ওসি সন্দীপ চট্টরাজের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েনি। তৃণমূলের প্রচারে নির্বাচনী বিধি ভেঙে মোটরবাইক মিছিলের অভিযোগ করেছিলেন বারাবনির বিডিও। এই ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার হারাধন গোস্বামী বিডিও-কে থানায় তলব করায় প্রশাসনের কর্তারা ক্ষুব্ধ হন। এসআই পদমর্যাদার অফিসার এই কাজ করতে পারেন কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এর পরেই মঙ্গলবার কমিশনের তরফে ওসিকে বদলি করা হয়।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের দাবি, “আমরা আগেই রানিগঞ্জের ওসিকে অপসারণের দাবি করেছিলাম। বারাবনির ওসির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ ছিল না। তবে নতুন যাঁরা আসছেন বলে জেনেছি, তাঁরাও খুব সুবিধার নন।’’ আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের বক্তব্য, “আমি আর কী বলব! রাজ্যে এখন আমাদের প্রশাসন চলছে না। নির্বাচন কমিশন প্রশাসন চালাচ্ছে। আমি কমিশনের সব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “ওই দুই ওসির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ ছিল না। তবে নির্বাচন কমিশন বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যাঁদের আনা হচ্ছে বলে শুনেছি, তাঁরা কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করবেন সেটাই এখন দেখার।’’ কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্র বলেন, “আশা করি নতুন ওসিরা কমিশনের নিয়মনীতি ঠিক ভাবেই মেনে চলবেন।”

কাঁকসার ওসি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে বরাবর অভিযোগ সিপিএমের। দলের কাঁকসার নেতা বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, “আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ-গুচ্ছ মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। কোনও রকম তদন্ত না করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কাঁকসা থানা।” তবে নির্বাচন কমিশনের কাছে ওসি-র কাজকর্ম নিয়ে তাঁরা কোনও অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক তথা কাঁকসার নেতা দেবদাস বক্সী অবশ্য ওই ওসি-র সঙ্গে তাঁদের দলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “বিভিন্ন সময়ে ওঁকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতেই দেখেছি। কেন তাঁকে সরানো হয়েছে, বলতে পারব না।” প্রশাসনের একটি সূত্রে আবার জানা গিয়েছে, মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে ওই ওসি গত এক বছর ধরে নানা অসহযোগিতা করেছেন। প্রশাসনের বহু নির্দেশ তিনি হয় মানেননি বা কার্যকর করতে যথেষ্ট উদ্যোগী হননি। নির্বাচন পরিচালনার কাজ করতে গিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ নেয়। তার পরেই জেলা প্রশাসনের তরফে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছিল।

অপসারিত ওসি-রা বদলির বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

transfer of police officers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE