Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাজই শেষ হয় না আধুনিক ইউনিটের

উন্নত সরঞ্জামের ব্যবস্থা হয়েছিল। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও প্রকল্প তরতর করে এগিয়ে চলেনি। আসানসোলে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে গড়ে ওঠা ‘রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ’ (আরসিএইচ) প্রকল্পের দু’টি কেন্দ্র ও ৯৭টি উপকেন্দ্রেও ঠিক মতো পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ।

শহরের বড় ভরসা এই জেলা হাসপাতাল। ছবি: শৈলেন সরকার।

শহরের বড় ভরসা এই জেলা হাসপাতাল। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

উন্নত সরঞ্জামের ব্যবস্থা হয়েছিল। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও প্রকল্প তরতর করে এগিয়ে চলেনি। আসানসোলে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে গড়ে ওঠা ‘রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ’ (আরসিএইচ) প্রকল্পের দু’টি কেন্দ্র ও ৯৭টি উপকেন্দ্রেও ঠিক মতো পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প ঠিক মতো চালাতে প্রয়োজন চার জন পূর্ণ সময়ের ডাক্তার। কিন্তু এখন রয়েছেন এক জন। আংশিক সময়ের চিকিৎসক দরকার ২৬ জন। এখন রয়েছেন মাত্র ৯ জন। জানা গেল, পূর্ণ সময়ের চিকিৎসকদের বেতন দেওয়া হয় প্রায় আট হাজার টাকা। আংশিক সময়ের চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে তা হাজার পাঁচেক। আসানসোল পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় সেন বলেন, “এত কম বেতনে চিকিৎসক মেলে না।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থের অভাবে এই প্রকল্পটি বেশ কয়েক বছর ধরেই খুঁড়িয়ে চলছে। এই অবস্থায় সমস্যায় পড়েছেন পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৯৪টি বস্তি অঞ্চলের বাসিন্দারা। জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এই পরিকাঠামোর জন্য অনুদান এসেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে। কিন্তু তার পরে তারা এটির দায়ভার ছেড়ে দেয়। সেই বছর এপ্রিল থেকে রাজ্য সরকার প্রকল্পটি হাতে নেয়। বছরে এক কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু খরচের বহর দিন-দিন বেড়ে চলায় বেশি বেতন দিয়ে চিকিৎসক রাখা যাচ্ছে না। তাই পরিষেবাতেও ঘাটতি পড়ছে।

আসানসোলে সবচেয়ে উন্নত ও আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার কথা জেলা হাসপাতালে। বছর তিনেক আগে সেটিকে মহকুমা হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু পরিকাঠামোর উন্নতি কতটা হয়েছে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, গত তিন বছরে একটি এসএনসিইউ বিভাগ ছাড়া আর নতুন কিছু হয়নি।

নতুন কিছু যে হয়নি, হাসপাতাল চত্বরে গেলেই তা মালুম পড়ে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ তৈরির কাজ। প্রথমে ঠিক ছিল দেড় বছরের মধ্যে এই ইউনিটটি তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু সময়সীমা পেরোনোর পরে আরও প্রায় দু’বছর অতিক্রান্ত। এখনও শেষ হয়নি এই ইউনিট তৈরির কাজ। কবে শেষ হবে তা-ও নিশ্চিত নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিক সঙ্কটের জন্যই এটি শেষ করা যাচ্ছে না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এটি তৈরি করার প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় দু’কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে এক কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। বাকি প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা।

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ট্রমা কেয়ার ইউনিটে বিভিন্ন রকম আধুনিক ব্যবস্থাপনা রাখতে হয়। যার ছিঁটেফোটা এখনও হয়নি। ফলে ইউনিটটি এখনই চালু করার আশু কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা আরও মনে করেন, তিন বছর আগে খরচের যে হিসেব ধরা হয়েছিল তার তুলনায় এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তাই বরাদ্দ না বাড়ালে কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, স্বাস্থ্য দফতরে বকেয়া চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলা হাসপাতালে ২০১৩ সালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং ২০১৪ সালে ডায়ালিসিস ইউনিট তৈরি হওয়ার কথা ছিল। সেই কাজও শেষ হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকরি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডায়ালিসিস ইউনিট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে সিসিইউ-এর কাজ। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই বছরেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

শহরের মানুষজনের অভিযোগ, নামেই এটি জেলা হাসপাতাল। না হয়েছে উন্নত ব্লাড ব্যাঙ্ক, না আধুনিক আপতকালীন বিভাগ। বহির্বিভাগেরও কোনও উন্নতি হয়নি। মহকুমা হাসপাতাল থাকাকালীন পরিকাঠামো যা ছিল, এখনও কার্যত তাই। সম্প্রতি হাসপাতালের পরিকাঠামো দেখতে এসেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, যে সব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা দ্রুত শেষ করা হবে।

আশায় বাঁচে শহর।

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে

কিছু বলার থাকলে ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর আসানসোল’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
বা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor sushanta banik asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE