Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষণিকের স্বস্তি, ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড শহর

দুপুর পর্যন্ত দুঃসহ গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন শহরবাসী। বিকেলে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে আবার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল দুর্গাপুর। রাস্তায়-রাস্তায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে নিষ্প্রদীপ শিল্পশহর। সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি থেমে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। দুর্গাপুরের ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হলেও আলো না থাকায় তাতে গতি আসছে না। মঙ্গলবার সকালের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। এ দিন ঝড়ের সময়ে মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক রাজমিস্ত্রির।

গাছ পড়ে অবরুদ্ধ দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।

গাছ পড়ে অবরুদ্ধ দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

দুপুর পর্যন্ত দুঃসহ গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন শহরবাসী। বিকেলে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে আবার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল দুর্গাপুর।

রাস্তায়-রাস্তায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে নিষ্প্রদীপ শিল্পশহর। সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি থেমে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। দুর্গাপুরের ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হলেও আলো না থাকায় তাতে গতি আসছে না। মঙ্গলবার সকালের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। এ দিন ঝড়ের সময়ে মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক রাজমিস্ত্রির।

গত কয়েক দিন ধরেই দাবদাহে জেরবার হচ্ছিল শিল্পাঞ্চল। বৃষ্টির আশায় হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন সকলেই। রবিবার দুপুরে এক বার এক ঝলক মেঘের দেখা মিললেও স্বস্তির বৃষ্টি আসেনি। সোমবার বিকেলে ফের মেঘ দেখা যায়। তার সঙ্গে হাওয়া। খানিকক্ষণের মধ্যে কালো মেঘে ঢেকে যায় গোটা আকাশ। সঙ্গে শুরু হয় তুমুল ঝড়। দুর্গাপুরে একের পর এক গাছের বড় ডালপালা ভেঙে পড়তে থাকে। ধুলোর ঝড়ে রাস্তাঘাটে সমস্যায় পড়েন পথচারী, মোটরবাইক ও গাড়ির চালকেরা। খানিক পরে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি নামে। তবে তার আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। ঝড়-বৃষ্টি থামার পরে দেখা যায়, শহরের কম-বেশি সব রাস্তাই গাছ পড়ে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

ঝড়-বৃষ্টি থামার পরে বাসিন্দারা গাছপালা রাস্তার এক দিকে সরিয়ে কোনও রকমে যাতায়াতের পথ তৈরিতে নামেন। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার রাস্তায় এত বেশি গাছ পড়ে যে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিটি সেন্টার ফাঁড়ির সামনের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। দুর্গাপুর মহিলা কলেজ থেকে ডিএসপি টাউনশিপের রাস্তার এক দিক বন্ধ হয়ে যায়। কোনও রকমে রাস্তার অন্য দিক দিয়ে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়।

মেঘে মেঘে। বর্ধমানে।

বিধাননগরেও একই পরিস্থিতি। ঝড় শুরু হওয়ার আগেই সেখানে বিদ্যুৎ চলে যায়। হাডকো মোড়-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বামুনাড়া, রাতুরিয়া-অঙ্গদপুরের মতো শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তৎপরতার সঙ্গে লাইন মেরামত শুরু হলেও অন্ধকারে বহু জায়গায় কাজ ব্যাহত হয়। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, যে ভাবে বিদ্যুতের তারের উপরে গাছ পড়েছে তাতে সকালের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

ঝড়ে পাঁচিল চাপা পড়ে দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় রাজমিস্ত্রি শেখ আতাউল (৩৫) মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। ভিড়িঙ্গিতে একটি মাটির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এ দিন বিকেলে ঝড়ের সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন। ঝড়ে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ায় তিনি চাপা পড়েন। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। এ দিন শহরে কয়েক জন জখমও হন।

মহকুমাশাসক সন্ধ্যায় জানান, মহকুমা জুড়েই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবের খবর মিলেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির খবর সে ভাবে এখনও এসে পৌঁছায়নি। গাছ সরিয়ে শহরের পরিস্থিতি কী ভাবে স্বাভাবিক করা যায় সে ব্যাপারে ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান তিনি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রায় সব রাস্তায় গাছ পড়েছে। রাতেই পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে।’’

এ দিন ঝড়বৃষ্টির জেরে অন্ডালে যে বিমান বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে নামার কথা ছিল, তা নামে প্রায় এক ঘণ্টা পরে। অন্ডাল ব্লকের কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। আসানসোলে বিকেল ৫টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। কিছু জায়গায় শিলাবৃষ্টিও হয়। তবে রাস্তায় গাছপালা পড়ার খবর মেলেনি। ঝড়বৃষ্টির সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলেও সন্ধ্যা থেকে তা স্বাভাবিক হয়েছে।

কাঁকসা ও গলসিতেও ঝড়ের তাণ্ডবে বহু গাছ উপড়ে পড়ে। বেশ কিছু বাড়ির খড়ের চাল উড়ে গিয়েছে, মাটির দেওয়াল পড়ে গিয়েছে। সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছু গবাদি পশুর। কাঁকসার বিদবিহার ও বনকাটি গ্রামে বেশ কিছু ঘর ভেঙে পড়ে। বুদবুদের সোঁয়াই গ্রামে মোবাইলের টাওয়ার উপড়ে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির খবর রাতের দিকে আসার সম্ভাবনা বেশি। সে কথা মাথায় রেখে ত্রিপল ও ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।

ছবি: বিকাশ মশান ও শৈলেন সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE