Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খাদ্য সুরক্ষার ফর্ম বিলি তৃণমূলের অফিস থেকে

সরকারি প্রকল্পের ফর্ম পেতে লাইন দিতে হল তৃণমূল অফিসে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে শাসক দলের অফিসে রীতিমতো টেবিল-চেয়ার পেতে বিলি করা হল খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের ফর্ম। এই ফর্ম এ ভাবে বিলি করা হচ্ছে বলে গত কয়েক দিন ধরে সিপিএমের তরফে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। বুধবার পুরসভার তরফে ঘোষণা করা হয়, ফর্ম বিলি হবে শুধু ওয়ার্ড অফিস থেকেই।

দুর্গাপুরের রায়ডাঙায় তৃণমূল অফিসের সামনে বিলি হচ্ছে ফর্ম। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিকাশ মশান।

দুর্গাপুরের রায়ডাঙায় তৃণমূল অফিসের সামনে বিলি হচ্ছে ফর্ম। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিকাশ মশান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

সরকারি প্রকল্পের ফর্ম পেতে লাইন দিতে হল তৃণমূল অফিসে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে শাসক দলের অফিসে রীতিমতো টেবিল-চেয়ার পেতে বিলি করা হল খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের ফর্ম। এই ফর্ম এ ভাবে বিলি করা হচ্ছে বলে গত কয়েক দিন ধরে সিপিএমের তরফে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। বুধবার পুরসভার তরফে ঘোষণা করা হয়, ফর্ম বিলি হবে শুধু ওয়ার্ড অফিস থেকেই। কিন্তু এ দিন দেখা যায়, দুর্গাপুরের নানা এলাকায় তৃণমূল অফিস থেকেই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে।
শুধু দুর্গাপুর নয়, খাদ্য সুরক্ষার দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই তা শাসক দলের অফিস থেকে বিলি করার অভিযোগ উঠেছে। বার্নপুরের পুরানহাটে ফর্ম পেতে হলে আগে তৃণমূলের অফিস থেকে টোকেন নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। তা না নেওয়ায় কয়েক জনকে লাইন থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল।
খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের প্রায় ৬ লক্ষ বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি ইতিমধ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় এসে গিয়েছেন। তবে সেই তালিকায় অনেক প্রকৃত প্রাপক জায়গা পাননি, আবার বহু স্বচ্ছল পরিবারের নাম তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই তালিকায় যাঁদের নাম নেই, অথচ আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনার খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে, তাঁদের এ বার সবুজ রঙের ফর্ম পূরণ করতে হবে। বাকিরা যদি গণবন্টন ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে চান তাহলে সাদা রঙের ফর্ম পূরণ করতে হবে। সরকারি নির্দেশে জানানো হয়েছে, এই সব আবেদনের অনুসন্ধান ও নিষ্পত্তির জন্য প্রতি পঞ্চায়েত ও পুরসভার ওয়ার্ড পিছু এক জন করে ‘এক্সটেনশন অফিসার’ থাকার কথা। তাঁর তত্ত্বাবধানে গ্রামে প্রতি চারটি জনগণনা ব্লক পিছু এক জন এবং পুরসভার ক্ষেত্রে ওয়ার্ড পিছু দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার থাকার কথা। ৩১ অগস্টের মধ্যে ফর্ম দেওয়া ও জমা নেওয়ার কাজ শেষ করার কথা।

কিন্তু ফর্ম দেওয়া শুরু হতেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অভিযোগ, প্রথমে শুধু শাসক দলের নেতাদের কাছেই ফর্ম মিলছিল। তা নিয়ে ক্ষোভ জানানোর পরে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টায়। মঙ্গলবার দুর্গাপুর পুরসভায় বিক্ষোভও দেখায় সিপিএম। বুধবার সকাল থেকে পুরসভার তরফে প্রচার করা হয়, প্রতিটি ওয়ার্ড অফিস থেকে ফর্ম দেওয়া ও জমা নেওয়া হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বি-টু এলাকায়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বি-ওয়ান এলাকায়, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফুলঝোড়ে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাঙ্ক কলোনি মোড়, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে সগড়ভাঙা গ্রাম, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে সগড়ভাঙা কলোনি, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে অঙ্গদপুর, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমিক নগর, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙা এলাকায় তৃণমূল কার্যালয় থেকে ফর্ম বিলি করা হয়েছে অভিযোগ উঠেছে।

এক দিকে যখন তৃণমূলের অফিসে ফর্ম নেওয়ার জন্য লাইন পড়েছে, তখন শহরের ৩ ও ৪ নম্বর বরো অফিস থেকে এ দিন কোনও ফর্ম দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে ফর্ম ফটোকপি করে অনেককে বিলি করা হচ্ছে। ফলে, একই সিরিয়াল নম্বরের ফর্ম একাধিক বাসিন্দার হাতে পৌঁছচ্ছে। তাতে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

সিপিএমের দুর্গাপুর পূর্ব ২ জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকারের অভিযোগ, ‘‘কারা দলের অনুগত, তা বিচার করে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের দুর্গাপুরের ৩ ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে অহেতুক রাজনীতি খুঁজে নিজেদের হেয় করছে সিপিএম।’’ শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘একটি ভাল প্রকল্পের কাজে কালি লাগাতে গোড়া থেকে উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম। হাতে সময় খুব কম। তাই যত রকম ভাবে পারা যায়, মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে।’’

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘খাদ্য দফতরের কাছে জেনেছি, ফর্ম পাঠানো হয়েছে বরো অফিসে। তার পরে কী ভাবে তা বিলি হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE