কোথাও তিনটে বাতিই নিভে, কোথাও একটি ভরসা। —নিজস্ব চিত্র।
নামেই ত্রিফলা।
আলো জ্বলে কোথাও দুটো, কোথাও একটা। কোনওটা আবার ধুলো, পোকায় ঝাপসা হয়ে জ্বলেই না। ফলে সন্ধে নামলেও আঁধার কাটে না কালনা শহরের বহু রাস্তায়।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় আলো না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। প্রবীণদের হাঁটাচলা, মেয়েদের টিউশন থেকে ফেরায় নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে। বাড়ছে অসামাজিক কাজকর্ম। সর্বোপরি যে পর্যটনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শহর, নিস্প্রভ রাস্তা দেখে তাঁরাও ফিরে যাচ্ছেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, মাস ছয়েক ধরে ত্রিফলা বাতিগুলি সারানো হয়নি। পুরসভাও মেনে নিয়েছে বেহাল ত্রিফলার কথা।
বছর চারেক আগে বর্ধমানের বেশ কয়েকটি তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার সঙ্গে কালনাতেও ত্রিফলা বাতি লাগানো হয়। তবে পুরো শহর নয়, তেঁতুলতলা থেকে ১০৮ শিবমন্দিরমুখী রাস্তা, মহাপ্রভু পাড়া-সহ কয়েকটি রাস্তার এক ধারে লাগানো হয় ত্রিফলা। কলকাতার একটি সংস্থা বরাত পায় বাতি লাগানোর। কিন্তু লাগানোর মাস ছয়েক পার হতে না হতেই ধীরে ধীরে নিভতে থাকে বাতি। যে সংস্থাটি আলো লাগানোর কাজ করেছিল তাদের সঙ্গে বছর খানেক মেরামতির চুক্তি থাকায় বিকল আলো সারানোর ব্যাপারে প্রথমে গড়িমসি দেখা যায় নি। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই পরিষেবা ক্রমশ কমতে থাকে। বর্তমানে তেঁতুলতলা থেকে ১০৮ শিবমন্দিরমুখী রাস্তা ঘুরলে দেখা যায়, বহু খুঁটিতে দুটি কিংবা একটি আলো জ্বলে। কোথাও আবার তিনটির একটিও জ্বলে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আলোর অভাব দেখা দিয়েছে ওই রাস্তাগুলিতে। ১০৮ শিবমন্দির এবং রাজবাড়ি কমপ্লেক্স এলাকাতেও অনেক আলো বিকল।
শহরের এক বাসিন্দা গৌতম সরকারের দাবি, যে সমস্ত এলাকাগুলিতে ত্রিফলা আলোর ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে অন্য আলো নেই। ফলে সন্ধ্যা নামলেই আলোর অভাব দেখা যাচ্ছে। ফলে মদ্যপ লোকজনেদের উৎপাত দেখা দিচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। আর এক বাসিন্দা রমেশ তালুকদার জানান, শহরে সম্প্রতি টোটো এবং অটোর মতো যানবাহন ব্যাপক বেড়ে গিয়েছে। অন্ধকার রাস্তার বিভিন্ন বাঁকে এই সমস্ত যানবাহন থেকে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি এক সময় শহরের শ্রী ফেরানোর জন্যই ত্রিফলা আলোগুলি লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে শহরের শ্রী তো নেই, উল্টে রাতের শহর আরও বিশ্রী হয়েছে। রমেশবাবুর দাবি, ত্রিফলা বাতিতে যে আলো লাগানো থাকে, তাতে এক দিকে যেমন স্বল্প আলো মেলে। তেমনি এই আলোগুলি দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বারবার সমস্যা হয়।
তবে শুধু ত্রিফলা বাতিই নয়, এ শহরের সাধারণ আলোর অবস্থাও করুণ। একে তো এই সব আলোগুলি প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার বাতিস্তম্ভে লাগানো রয়েছে। তার উপরে আলোর মুখে প্লাস্টিকের যে আস্তরণ থাকে তা রোদে-জলে বেশির ভাগই ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও আলোর মুখে জমে রয়েছে পোকা এবং ধুলোর স্তর। ফলে পর্যাপ্ত আলো মেলে না। আবার একটি স্তম্ভ থেকে আর এক স্তম্ভ দূরে হওয়ায় আলো মেলে না বলেও বাসিন্দাদের দাবি।
পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের যদিও দাবি, যে সংস্থাটি আলো লাগিয়েছিল তারাই ত্রিফলা দেখভালের কাজ করতে পারে। পুরসভার তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি শিঘ্রই সমস্ত ত্রিফলা বাতিতে আলো জলে উঠবে। এ ছাড়াও শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাতিস্তম্ভ লাগানো হবে বলেও তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy