Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জিতলেই মদ-মাংস, লটারির লাইনে দাদু-ঠাকুমাও

প্রথম পুরস্কার তিন কেজি খাসির মাংস। দ্বিতীয়, পাঁচ কেজি মুরগির মাংস। আর তৃতীয় হলে? পুরো ‘১ লিটার রাম মদ’! এই পুরস্কার তালিকা এক লটারি প্রতিযোগিতার। আয়োজন করেছে বর্ধমানের মেমারি পুরসভার জোয়ানপুরের একটি ক্লাব। দুর্গাপুজো শেষ। কালীপুজোও। ভাইফোঁটা চলে গেলে তো আবার সেই থোড়-বড়ি-খাড়া।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

প্রথম পুরস্কার তিন কেজি খাসির মাংস। দ্বিতীয়, পাঁচ কেজি মুরগির মাংস। আর তৃতীয় হলে? পুরো ‘১ লিটার রাম মদ’!

এই পুরস্কার তালিকা এক লটারি প্রতিযোগিতার। আয়োজন করেছে বর্ধমানের মেমারি পুরসভার জোয়ানপুরের একটি ক্লাব।

দুর্গাপুজো শেষ। কালীপুজোও। ভাইফোঁটা চলে গেলে তো আবার সেই থোড়-বড়ি-খাড়া। ঝিমিয়ে পড়ছিলেন পাড়ার ডানপিটে যুবকেরা। আচমকাই ক্লাবের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনায় উঠে আসে ‘আইডিয়া’-টা। লটারি প্রতিযোগিতা করলে কেমন হয়?

তাতে অবশ্য নতুনত্ব নেই। নতুনত্ব পুরস্কারের তালিকায়। লটারিতে যিনি জিতবেন তাঁকে এমন কিছু দেওয়া হবে, যার মধ্যে যেমন নতুনত্ব থাকবে, তেমনই পুরস্কার হাতে পেলে বত্রিশ পাটি দাঁত বেরিয়ে পড়বে।

যেমন? প্রথম পুরস্কার তিন কিলোগ্রাম খাসির মাংস। বাজারে যার দাম প্রায় ১৩০০ টাকা। মাত্র ১০ টাকার টিকিটের বদলে সেই মাংস হাতে পেলে খুশি তো হওয়ারই কথা! দ্বিতীয় পুরস্কার পাঁচ কিলোগ্রাম মুরগির মাংস। দেশি নয়, পোলট্রির। আরও বেশি অভিনবত্বের ছোঁয়া রয়েছে তৃতীয় পুরস্কারে। টিকিটে লেখা রয়েছে ‘১ লিটার রাম মদ’। এ ভাবে মোট ১১টি পুরস্কারের তালিকা ছাপা রয়েছে টিকিটের ওপরেই। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য অষ্টম পুরস্কার ২৫০ গ্রাম দই। পাবেন দু’জন।

বর্ধমানের মেমারি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়ে এই জোয়ানপুর। সেখানকার নটরাজ ক্লাবের সদস্যরা আজ, ভাইফোঁটার দিন বিকেলে ক্লাব-প্রাঙ্গণে আয়োজন করেছেন এই ‘খাই খাই লটারি প্রতিযোগিতার’। ক্লাবের সম্পাদক সাধন সিংহ বেজায় লজ্জিত। বললেন, “এখানে প্রায় ১২০টি পরিবার থাকে। ইচ্ছে ছিল, আমাদের এলাকার মধ্যেই লটারি খেলা সীমাবদ্ধ রাখা হবে। কিন্তু, পুরস্কারের কথা কী করে যে ছড়িয়ে পড়ল, বুঝতে পারছি না।” সাধনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কয়েক জন বন্ধু-বান্ধব কয়েকটি টিকিট কিনেছিলেন। তাঁদের মধ্যেই কোনও এক সুহৃদ টিকিটটি স্ক্যান করে ফেসবুকে পোস্ট করে দেন।

কলেজ পড়ুয়া, ২৩ বছরের সাধনের অকপট স্বীকারোক্তি, এ দিককার মানুষ খেতে ভালবাসেন। তিন বছর ধরে দুর্গাপুজোর সময়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে লটারির আয়োজন করা হচ্ছিল। পুরস্কার ছিল টিভি, সাইকেল। এ বারও তাই হয়েছে। কিন্তু, সেই লটারি নিয়ে মানুষের উৎসাহ কমতে শুরু করছে। এ বার অনেক টিকিট বিক্রিই হয়নি। তবে, ভাইফোঁটার দিন এই নতুন লটারি খেলার কথা জানতে পেরে পাড়ার দাদা-বৌদি, দাদু-ঠাকুমা সবাই টিকিট কিনতে আসছেন। ৫০০ টিকিটের মধ্যে ৪৯৮টি ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সাধনের কথায়, “এতটা ভাল সাড়া পাব, বুঝিনি।”

ঠিক হয়েছে, সরস্বতী পুজোর সময়ে পাড়ায় আবার ‘খাই খাই লটারি’ প্রতিযোগিতা করা হবে। “তখন অবশ্য পুরস্কারের তালিকায় রাম মদ থাকবে না। সরস্বতী পুজো তো!” বললেন সাধন। এ-ও বললেন, পাড়ার অনেকেই তৃতীয় পুরস্কার ও পঞ্চম পুরস্কার (রাম এর নিব)-এর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু, পাড়ার কোনও কাকিমা-ঠাকুমার ভাগ্যে তৃতীয় বা পঞ্চম পুরস্কার উঠলে? সাধন জানিয়েছেন, মূল্য ধরে দেওয়া হবে তাঁকে।

মেমারির বিডিও-র সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্বর। সহৃদয় সেই ব্যক্তিই খোঁজ নিতে যান জোয়ানপুর। ফিরে এসে সাধনের নম্বর তিনিই দেন। বলেন, “আমরাও কিছু জানতাম না। দারুণ ব্যাপার! আমিও একটা টিকিট কেটে নিয়েছি। বলা তো যায় না...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE