Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
রাজ কলেজ

টিএমসিপি নেতাদের সরিয়ে কাউন্সেলিং

রাজ্যের নানা কলেজে পরপর অধ্যক্ষ নিগ্রহ, টিচার-ইনচার্জদের ইস্তফার ঘটনার মধ্যে ব্যতিক্রমী ছাপ রাখল বর্ধমান রাজ কলেজ। মঙ্গলবার অনার্সের বিষয়-বদল ও দ্বিতীয় কাউন্সেলিং চলাকালীন টিএমসিপির ছাত্রনেতাদের রীতিমতো ধমকে হলের বাইরে পাঠিয়ে দেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বর মণ্ডল। কিছুদিন আগেই রাজ কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

রাজ্যের নানা কলেজে পরপর অধ্যক্ষ নিগ্রহ, টিচার-ইনচার্জদের ইস্তফার ঘটনার মধ্যে ব্যতিক্রমী ছাপ রাখল বর্ধমান রাজ কলেজ। মঙ্গলবার অনার্সের বিষয়-বদল ও দ্বিতীয় কাউন্সেলিং চলাকালীন টিএমসিপির ছাত্রনেতাদের রীতিমতো ধমকে হলের বাইরে পাঠিয়ে দেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বর মণ্ডল।

কিছুদিন আগেই রাজ কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে কোনও পরিস্থিতিতে ছাত্রদের চাপের কাছ নতি স্বীকার না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ছাত্রদেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এ ধরণের চাপসৃষ্টির কোনও অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাসেই এ দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বর মণ্ডল কাউন্সেলিংয়ের সময় ভিড় করা টিএমসিপির ছাত্র সংসদের নেতাদের হলের বাইরে বের করে দিতে পেরেছেন।

কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের কাউন্সেলিং ও বিষয়-বদল থাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীদের ভিড় ছিল কলেজে। ছিলেন অভিভাবকেরাও। তারকেশ্বরবাবুর দাবি, অনেক অভিভাবকই ফোনে তাঁকে অনার্সে ইন্টারচেঞ্জ ও কাউন্সেলিং যাতে নিরপেক্ষ ভাবে হয়, সেই অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “পাস পাঠ্যক্রমে ভতির্র্র সময় অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে ছাত্র সংসদের নেতারাই তাঁদের ভর্তি করাচ্ছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন। সম্ভবত এ নিয়ে কেউ শিক্ষমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করেছিলেন। তিনি তারই প্রেক্ষিতে আমাকে ওই ভর্তি কঠোর ভাবে করানোর ব্যবস্থা নিতে বলেন।”

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও ছাত্র নেতাদের একাংশ সরাসরি কাউন্সেলিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট হলে ঢুকে পড়েন। অনেকে হলের বাইরে ঘোরাফেরা করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি দেখে কয়েকজন অভিভাবক অধ্যক্ষকে ফোন করে নিরপেক্ষ কাউন্সেলিংয়ের জন্য আবেদন জানাতে থাকেন। একই অভিযোগের বেশ কয়েকটি ফোন পেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাঁর চেম্বারের বাইরে বের হয়ে আসেন। অধ্যক্ষ জানান, কাউন্সেলিংয়ের হলের বাইরে ও ভেতরে প্রচুর ভিড় দেখেন তিনি। ভিড়ে সামিল ছিল ছাত্রনেতা ও বহিরাগতরাও। অধ্যক্ষ নির্দেশ দেন, কাউন্সেলিং যাঁদের হবে তাঁরা ছাড়া আর কোনও ছাত্র যেন হলে না ঢোকেন। অনেকে নির্দেশ মানতে না চাইলে রীতিমতো ধমক দিয়ে তাঁদের কাউন্সিলিং হল ও হল সংলগ্ন জায়গা থেকে বের করে দেওয়া হয়। কাউন্সেলিংয়ে আসা প্রায় ২০০ জনের নাম নিজে ডাকতে থাকেন অধ্যক্ষ। তারপরে সবাইকে নির্দিষ্ট অডিটোরিয়ামে ঢুকিয়ে গেট বন্ধ করে দেন। অধ্যক্ষের আচরণে খানিকটা উত্তেজন্য দেখা যায় টিএমসিপি নেতাদের মধ্যে। তবে অধ্যক্ষের নির্দেশ মেনে হলের আশপাশ থেকে সরে যান তাঁরা। পরে অধ্যক্ষ বলেন, “একসময় ভেবেছিলাম নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু কাউন্সেলিংয়ের জন্য পুলিশের সাহায্য নিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি। এতে আমি খুশি।”

কলেজের অ্যাডমিশন কমিটির আহ্বায়ক বিজয় চন্দ বলেন, “অধ্যক্ষ উদ্যোগী হতেই ছাত্র নেতারা দলবল সমেত হলের সামনে থেকে চলে যান। তাঁদের কাছ থেকে শেষ দিকে সাহায্যই পেয়েছি আমরা।” তিনি জানান, বেশ কিছু বিষয় যেমন অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজতত্ব, সংস্কৃত, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদিতে ১০-১৫টি আসন শূন্য রয়েছে। ওই আসনগুলিকে নিয়ে কী করা হবে তা পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে ঠিক করা হবে।

তবে ছাত্র সংসদের নেতা প্রদীপ হাজরা ও শেখ বাপ্পার দাবি, “আমরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে কাউন্সেলিং হয় তা দেখতেই এসেছিলাম। অধ্যক্ষ আপত্তি করায় কলেজের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে নিজেরাই বের হয়ে গিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bardwan raj college tmcp counselling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE