কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর অর্থের ভরসায় বসে না থেকে দুর্গাপুরের তৃতীয় পর্যায়ের জল প্রকল্পের থমকে যাওয়া কাজ শেষ করতে এগিয়ে এসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) এবং পুরসভা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (পানীয় জল সরবরাহ) প্রমোদ সরকার জানান, মাস তিনেকের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
পুরসভার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পানীয় জলের আকাল রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে কুয়ো। সারাই হয় না টিউবওয়েল। পুরসভা নিয়মিত জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পানীয় জলের চাহিদা বেড়েছে বিধাননগর এলাকাতেও। গত কয়েক বছরে বিধাননগরে গড়ে উঠছে বহু নতুন আবাসন, বেসরকারি কলেজ, ছাত্রাবাস। কয়েক হাজার পড়ুয়া বাইরে থেকে এসে থাকেন বিধাননগরে। তা ছাড়া মহকুমা হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতাল, নার্সিংহোম, মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, স্কুল, তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, হোটেলও রয়েছে। শোভাপুর এলাকায় গড়ে উঠছে আইকিউ সিটি। বাইরে থেকে আসা লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে সিটি সেন্টার এলাকাতেও। শহরের পাশেই গড়ে উঠছে অন্ডাল বিমাননগরী। সেখানে নিজস্ব কোনও জল প্রকল্প নেই। তাই পুর এলাকা থেকেই সেখানে দৈনিক গ্যালন-গ্যালন জল সরবরাহ করার কথা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে প্রথম পর্যায়ের জল প্রকল্প গড়ে ওঠে ২০০০ সাল নাগাদ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর প্রকল্পটি রূপায়ণ করে। কিন্তু তা যথেষ্ট না হওয়ায় ২০০৫ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের জল প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় পুরসভা। আর্থিক কারণে সেটি জেএনএনইউআরএম-এর অধীনে নিয়ে যায় পুরসভা। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ৭০ লক্ষ গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন জলপ্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। পুরসভার তরফে তখন মন্ত্রীকে জানানো হয়, শহরের পরিসর যে ভাবে বাড়ছে তাতে আরও জলপ্রকল্প গড়া দরকার। অশোকবাবু তখন দেড়শো লক্ষ গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা জমা দিতে বলেন। রাজ্য সরকার তা পাঠায় কেন্দ্রের কাছে। ২০১০ সালের মে মাসে প্রকল্পটি কেন্দ্রের অনুমোদন পায়। বাজেট ধরা হয় ১২৬ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক খরচ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। এ ছাড়া রাজ্য সরকার ৩৫ শতাংশ, এডিডিএ ১০ শতাংশ এবং পুরসভা ৫ শতাংশ খরচ দিয়েছে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পে শহরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৮টি জলাধার গড়ার কাজ চলছে। কয়েকটির কাজ বেশ এগিয়ে গিয়েছে। দু’একটি তুলনায় পিছিয়ে আছে। দামোদর থেকে জল তুলে তা পরিশোধন করে এই জলাধারগুলিতে রাখা হবে। তার পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা সরবরাহ করার কথা। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন জলাধারগুলি নির্মাণের কাজ প্রায় বন্ধ ছিল। এক আধিকারিক জানান, প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র থেকে ধাপে ধাপে টাকা পাঠানো হয়। শেষ বার টাকা এসেছে কয়েক মাস আগে। তার পরে টাকার অভাবে কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মেয়র পারিষদ (পানীয় জল সরবরাহ) প্রমোদবাবু জানান, এডিডিএ-র তরফে অর্থের অভাবের কথা জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার কিছু টাকা বরাদ্দ করেছে। এর পরেই এডিডিএ এবং পুরসভা বকেয়া কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হয়। প্রমোদবাবু বলেন, “জলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শেষ করার উদ্যোগ হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy