Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঠেকুয়া, বাজিতে ছট শিল্পাঞ্চলে

ঘাটে ঘাটে মশার স্প্রে ছড়িয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল দিন কয়েক আগে থেকেই। বুধবার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন নদী, জলাশয়ের পাড় জুড়ে কার্যত উৎসবের চেহারা নিল ছট পুজো। মূলত হিন্দিভাষীদের ব্রত হলেও শিল্পাঞ্চল বরাবরই ছট পুজো বড় উৎসব। এ দিনও মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় সাধারণত ছটের ব্রত পালন করেন সধবা মহিলারা।

বাঁ দিকে, বীরভানপুর ঘাটে চলছে পুজো। ডান দিকে, আসানসোলে বরাকরের তীরে ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, বীরভানপুর ঘাটে চলছে পুজো। ডান দিকে, আসানসোলে বরাকরের তীরে ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী ও অর্পিতা মজুমদার
রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

ঘাটে ঘাটে মশার স্প্রে ছড়িয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল দিন কয়েক আগে থেকেই। বুধবার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন নদী, জলাশয়ের পাড় জুড়ে কার্যত উৎসবের চেহারা নিল ছট পুজো।

মূলত হিন্দিভাষীদের ব্রত হলেও শিল্পাঞ্চল বরাবরই ছট পুজো বড় উৎসব। এ দিনও মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় সাধারণত ছটের ব্রত পালন করেন সধবা মহিলারা। সোমবার, ‘নাহানখানা’র দিনে সারাদিন উপোস করে রাতে ‘লাউভাত’ খাওয়া হয়। মঙ্গলবারও উপোস করে দুধ-গুড় দিয়ে তৈরি আতপ চালের ভাত বা ‘খড়না’ খাওয়ার চল রয়েছে। এতে নিমন্ত্রণ থাকে প্রতিবেশীদেরও। বুধবার উপোস করে নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ের ঘাটে সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন মহিলারা। বৃহস্পতিবার সকালে সূর্যোদয়ের সময় ফের অর্ঘ্য নিবেদন করে উপোস ভঙ্গ করা হয়। পুজোর উপাচারে অন্যতম উপাদান ‘ঠেকুয়া’।

সূর্যের উপাসনা হলেও ‘ছটি মা’য়ের পুজো নামেই ব্রতটি প্রচলিত। এর কারণ জানাতে গিয়ে রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের হিন্দী বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিপি বর্ণয়াল জানান, জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, বিহারের নালন্দা জেলার বাসিন্দা ছটদেবী প্রথম সূর্যের ব্রত উদযাপন করে সিদ্ধিলাভ করেন। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ মানুষও ছট পুজো করতে শুরু করেন। প্রথম ভক্ত ছটদেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ব্রতটিকে ছট মায়ের পুজো বলা হয়।

দুর্গাপুর শহরে সবচেয়ে বড় ছট পুজোর আয়োজন হয় কুমারমঙ্গলম পার্কে। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই পার্ক দু’দিনের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ জলাশয়টিকে পুজো কমিটি বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে যাতে কেউ গভীর জলে যেতে না পারে। রয়েছে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থাও। কোনও রকম অশান্তি এড়াতে বুধবার বিকাল থেকেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব পার্কে এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে যান। এছাড়া শহরের অর্জুনবাঁধ পুকুর, বেনাচিতির ধর্মপুকুর, ডিভিসি ব্যারাজ, সগরভাঙা, মায়াবাজার সহ বিভিন্ন এলাকাতেও মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

শিল্পাঞ্চলে ছট পুজোর অন্যতম বড় জায়গা অন্ডালের উখড়ার হনুমানডাঙা। পুজো শেষের দিন সন্ধ্যায় জলাশয়ের মাঝখানে হবে আতসবাজি পোড়ানোর আসর। বাঁকোলা রোড এলাকার বিবিরবাঁধের পুজোও বেশ জনপ্রিয়। বাঁকোলা মশানধাওড়া ও পাঙ্খাধাওড়ায় ইসিএল-এর পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জলে পুজোর আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নদীর ঘাটগুলিতেও ছটপুজো জমে উঠেছে। পাণ্ডবেশ্বরে অজয়ের ঘাটে পঞ্চপাণ্ডবের শিব মন্দির পাড় এলাকায় পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেল, নদীর ওপারে বীরভূম থেকেও অনেকে এখানে আসেন। অজয়ের ধারে মেটালধাওড়া, ছত্রিশগন্ডা, রামনগর কোলিয়ারি, রামনগর গ্রামের ঘাটেও উপচে পড়েছে মানুষের ভিড়। মেটালধাওড়া ছট পুজো কমিটির সদস্য পাপু সিংহ জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত কমিটিগুলোই ঘাট পরিষ্কার থেকে আলোর ব্যবস্থা করে। অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কাঞ্চন মিত্র জানান, শ্রীরামপুর, রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েত ও অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতি সম্মলিতভাবে পুরো ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করেছে। দামোদরের বাসকা, কুঠিডাঙা, রামপ্রসাদপুর ঘাটেও পুজো আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ছট পুজোর আয়োজনে পিছিয়ে নেই রানিগঞ্জও। শহরের ২০টি জলাশয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়। রানিগঞ্জ পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, জলাশয়ের ঘাট পরিষ্কার ও জলাশয়ে মশা মারার স্প্রে দেওয়া হয়েছে। মেরামত করা হয়েছে ২টি রাস্তাও। পুরপ্রধান অনুপ মিত্র জানান, জ্ঞানভারতী ও কলেজরোডের প্রায় ১৬ হাজার বর্গফুট রাস্তা মেরামত করতে খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা।

নজর কেড়েছে জামুড়িয়ার পরাশিয়ায় ছট পুকুরের ৪টি আলোর তোরণ। ইস্ট কেন্দায় পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জলে ব্রত পালন করা হয়। জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমতির সহ-সভাপতি উজিত সিংহ জানান, সবই স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়োজন। আমরা শুধু নজর রেখেছি প্রশাসনিক তৎপরতার দিকে।

আসানসোলের লোকো পুকুর, গারুই নদী এবং বরাকরে দামোদরের ঘাটেও উৎসাহী মানুষের ভিড় নজরে পড়েছে। শহর পাশাপাশি গ্রামগুলিতেও ছট পুজোতে মেতেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্ডালের সিঙ্গারণ নদীর ধারে ছট পুজো করেন অন্ডাল মোড়, ১২ ও ১৩ নম্বর রেল কলোনি, উত্তর বাজার এলাকার মহিলারা। কাঁকসার পানাগড়, গলসি ১ ব্লকের বুদবুদেও ছট পুজোর আয়োজনও বেশ জমাটি। হিন্দিভাষীদের পাশাপাশি বাঙালিরাও অনেকে পুজো দেখতে হাজির হয়েছিলেন। কুমারমঙ্গলম পার্কে পুজো দেখছিলেন বি-জোনের বাসিন্দা শিবকালী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মতো এ বারেও এসেছি।” আসানসোলের বাসিন্দা পরিচিত হিন্দি কবি পওন বাঁকেবিহারী জানান, হিন্দি বলয়ের সবথেকে বড় উৎসব ছট। কিন্ত অনেকেই কর্মসূত্রে বাড়ি ছেড়ে শিল্পাঞ্চলে বাস করেন। তাই এখানেও পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি থাকে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE