Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দাদাগিরি বন্ধের বার্তা নেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায়

শাসক দলের কর্মী ইউনিয়নের দাপটে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল তটস্থ। কয়েক মাসে দাদাগিরির একাধিক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। কোথাও তোলাবাজির চোটে কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। কোথাও শিল্প আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন। এত কিছুর পরেও শুক্রবার দুর্গাপুরে দলের কর্মী সম্মেলনে শিল্পাঞ্চলে দলের দাদাগিরি বন্ধে কোনও বার্তা শোনা গেল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে।

মমতার সভায় খোকন রুইদাস।—নিজস্ব চিত্র।

মমতার সভায় খোকন রুইদাস।—নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

শাসক দলের কর্মী ইউনিয়নের দাপটে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল তটস্থ। কয়েক মাসে দাদাগিরির একাধিক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। কোথাও তোলাবাজির চোটে কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। কোথাও শিল্প আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন। এত কিছুর পরেও শুক্রবার দুর্গাপুরে দলের কর্মী সম্মেলনে শিল্পাঞ্চলে দলের দাদাগিরি বন্ধে কোনও বার্তা শোনা গেল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে।

শাসক দলের অন্য শীর্ষ নেতারাও কোনও সতর্কতা জারি করেননি। সম্মেলনের আগেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, দুর্গাপুরের বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়-সহ বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের দলের নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী এবং দলের অন্য শীর্ষ নেতারা। সেখানেও শিল্পাঞ্চলে দাদাগিরি বন্ধে বার্তা দেওয়া হয়নি বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। ফলে আশঙ্কায় আসানসোল-দুর্গাপুরের শিল্প ও বণিকমহল।

তাদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, কয়েকটি ঘটনায় তা স্পষ্ট। ২০১২-র ১৫ ডিসেম্বর দুর্গাপুরের জয় বালাজি ইস্পাত কারখানায় তৎকালীন দুর্গাপুর ৩ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি অসীম প্রামাণিক আধিকারিকদের আটকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সে রাতেই অরুণ থাতৈ নামে কারখানার এক জেনারেল ম্যানেজার বিধাননগরে আবাসনে কয়েক জন দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হন। কারখানা গোটানোর হুমকি দেন কর্তৃপক্ষ। ২১ ডিসেম্বর বিধাননগরের ‘দ্য মিশন হাসপাতাল’ এর সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে হাসপাতালের কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত করার অভিযোগ ওঠে অসীমবাবুর বিরুদ্ধে। ২০১৩-র ১১ মার্চ দল থেকে বের করে দেওয়া হয় তাঁকে। ২০১৩-র ২৯ অক্টোবর ডিপিএলের আইএনটিটিইউসি নেতা দেবদাস মজুমদারের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভে ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। ২০ ডিসেম্বর মিশন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার এবং হাসপাতাল ভাঙচুরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দেবদাসবাবুর বিরুদ্ধে।

৭ জুন জামুড়িয়ায় একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ ঘিরে সিন্ডিকেট-বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। জুলাইয়ে জামুড়িয়ায় শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানায় দাদাগিরির অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাসের বিরুদ্ধে। তাঁকে প্রথমে শো-কজ ও পরে দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।

৩ জুলাই তৃণমূলের তৎকালীন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি খোকন রুইদাসের বিরুদ্ধে দলেরই বিধায়ক তথা এডিডিএ চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়ের কাছে সিন্ডিকেট চালানো ও তোলাবাজির অভিযোগ জানান। পরে এক মহিলার করা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে খোকনবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অক্টোবরে তাঁকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে দল।

তবুও শিল্পাঞ্চলে এসে তৃণমূল নেত্রী বা দলের অন্য শীর্ষ নেতারা ট্রেড ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধে বার্তা দিলেন না কেন? দলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতি তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের দাবি, “দলনেত্রী সার্বিক বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, মানুষের জন্য কাজ না করলে দল সেই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, দলের শ্রমিক ইউনিয়নের ঝান্ডা নিয়ে কোথায় কত ইউনিট গড়ে উঠেছে, তার হিসেব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সব হিসেব পেলে কোনও কারখানাতেই দলের একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন রাখা যাবে না বলে নির্দেশ জারি করা হবে। যে হেতু এই প্রক্রিয়াটি চলছে, তাই আর সম্মেলনে দলের শ্রমিক ইউনিয়নের দাদাগিরি নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

এ দিনের সভায় অবশ্য প্রতিনিধি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতা খোকনবাবুকে। দেখা গিয়েছে আর এক বহিষ্কৃত নেতা অসীমবাবু এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ভাঙচুর ও মারপিটে অভিযুক্ত কাউন্সিলর হীরা বাউড়িকেও। এর ফলে কি শিল্পমহলে নেতিবাচক বার্তা যাবে না? তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, “দলে ফেরার বা পুরনো জায়গা ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে সকলের। শুধু আচরণ বদলাতে হবে। সকলের দিকেই দলের কড়া নজর রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamta khokan ruidas tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE