Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গাপুরে দাদাগিরি, গ্রেফতার তৃণমূল নেতা

ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আগেই ছিল। এ বার যোগ হল তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ঢুকে গুন্ডামি। ফের শিল্পক্ষেত্রে দাদাগিরির অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে দুর্গাপুরের গাঁধী মোড়ে ওয়েবেল তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে বাজি পোড়াচ্ছিলেন একটি সংস্থার কর্মীরা। তাতেই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া জরুরি বোধ করেন হিরা বাউরি নামে এক কাউন্সিলর।

ভাঙচুর হওয়া গাড়ি। (ইনসেটে) প্রহৃত রীতেশকুমার দ্বিবেদী। (ডান দিকে) ধৃত কাউন্সিলর হিরা বাউরি। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

ভাঙচুর হওয়া গাড়ি। (ইনসেটে) প্রহৃত রীতেশকুমার দ্বিবেদী। (ডান দিকে) ধৃত কাউন্সিলর হিরা বাউরি। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আগেই ছিল। এ বার যোগ হল তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ঢুকে গুন্ডামি। ফের শিল্পক্ষেত্রে দাদাগিরির অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।

বুধবার গভীর রাতে দুর্গাপুরের গাঁধী মোড়ে ওয়েবেল তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে বাজি পোড়াচ্ছিলেন একটি সংস্থার কর্মীরা। তাতেই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া জরুরি বোধ করেন হিরা বাউরি নামে এক কাউন্সিলর। সদলবলে পার্কে কিছু কর্মী এবং সংস্থার এক ডিরেক্টরকে তিনি মারধর করেন বলে অভিযোগ। ভাঙচুরও চালানো হয়। হিরা-সহ তিন জন গ্রেফতার। বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার সময়ে পুলিশ আগের ধর্ষণের চেষ্টার মামলাটিও জুড়ে দেয়। পার্কে গুন্ডামির ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর হলেও ধর্ষণের চেষ্টার মামলায় বিচারক তিন জনকেই ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।

আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এর আগেও বারবার শাসকদলের বিরুদ্ধে দাদাগিরি এবং গুন্ডামির অভিযোগ উঠেছে। সগড়ভাঙায় জয় বালাজি ইস্পাত কারখানায় ঢুকে আধিকারিকদের হুমকি দেওয়া, আইএনটিটিইউসি নেতার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির দাবিতে ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে মারধর, জামুড়িয়ায় শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানায় হুমকি, প্রতাপপুরে নির্মীয়মাণ কাগজ কলে লোক নিয়োগে গোষ্ঠীবাজি, বোনাস নিয়ে ঝামেলার জেরে দুর্গাপুরের কারখানায় ভাঙচুর একের পর এক ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। হিরা বাউরির বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের চত্বরে বাজি পোড়াচ্ছিলেন একটি সংস্থার তিন কর্মী। হিরা বাউড়ি তিন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে এসে দাবি করেন, সেখানে শব্দবাজি পোড়ানো হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। কর্মীরা পাল্টা বলেন, তাঁরা নিজেদের অফিস চত্বরে বাজি পোড়াচ্ছেন। আশপাশে বাড়িঘর নেই। তবু যদি অসুবিধা হয়, তা হলে তাঁরা যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। অমর চৌধুরী, শুভেন্দু গুছাইত এবং নারায়ণ চন্দ্র দাস নামে ওই তিন কর্মীর অভিযোগ, এতেই খেপে উঠে হিরা ফোন করে আরও ১০-১২ জনকে ডেকে নেন। কয়েক জন তাঁদের উপরে চড়াও হয়। বাকিরা রড-ইট দিয়ে একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। আশপাশে সাজানো ফুলের টব লন্ডভন্ড করে দেয়।

চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে আসেন সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রীতেশকুমার দ্বিবেদী। তাঁর অভিযোগ, কয়েক জন রড দিয়ে তাঁকেও পেটাতে শুরু করে। রীতেশবাবুর অভিযোগ, “ওরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। হাতে কাটারিও ছিল।” কিছুক্ষণ তাণ্ডব চালিয়ে হামলাকারীরা ফিরে যেতেই সংস্থার কর্মীরা পুলিশকে ফোন করেন। খানিক পরে সিটি সেন্টার ফাঁড়ি, ফরিদপুর ফাঁড়ি এবং দুর্গাপুর থানা থেকে পুলিশ আসে। রাতেই হিরা, তাঁর অনুগামী রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ও সন্তু মুখোপাধ্যায়কে ফরিদপুরের বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়। এ দিন তাঁদের বিরুদ্ধে মারপিট, গুন্ডামি, ভাঙচুর, হুমকি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। হিরা অবশ্য দাবি করেন, “আমি কাউকে মারধর করিনি। বাজি পোড়ানোর প্রতিবাদ করতে গেলে ওরাই আমাদের মারধর করেছে। আমায় ফাঁসানো হয়েছে।”

হিরার বিরুদ্ধে গুন্ডামির অভিযোগ কিন্তু এই প্রথম নয়। গত বছর এপ্রিলে ‘কানামাছি’ নামে একটি ছবিতে শাসকদলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে দুর্গাপুরের একাধিক মাল্টিপ্লেক্সে সেটির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। হিরাই ছিল মূল অভিযুক্ত। এর পরে জুলাইয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে একটি পারিবারিক বিবাদে মীমাংসা করতে গিয়ে এক মহিলাকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে হিরার বিরুদ্ধে। অগস্টে দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে একটি পানশালায় হামলার ঘটনাতেও তাঁর নাম জড়িয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে নিজের লোকেদের চাকরির দাবিতে হুমকি দেওয়াতেও তিনি অভিযুক্ত। রীতেশবাবু অভিযোগ করেন, “গত বছর দুর্গাপুজোয় চাহিদা মতো চাঁদা না দেওয়ায় হিরা বাউরি আর তার সঙ্গীরা আমাদের ব্যাপক হেনস্থা করেছিল। বারবার ওরা আমাদের উপরে চড়াও হচ্ছে। সংস্থার কর্মীরা আতঙ্কে ভুগছেন।”

হিরার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি উঠেছিল গত এপ্রিলের মাঝামাঝি। স্থানীয় এক মহিলা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন ওই কাউন্সিলর-সহ কয়েক বিরুদ্ধে। আদালতে আগাম জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় হিরা ও অন্য অভিযুক্তেরা কিছু দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। পুলিশ আর তাঁদের ধরেনি। দুর্গাপুর থানার একটি সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় অভিযোগ সম্পর্কে যথেষ্ট নিশ্চিত না হয়ে কাউন্সিলরকে ধরা যাচ্ছিল না। এ দিন গ্রেফতার করেও পুলিশ কেন তাঁদের নিজেদের হেফাজতে কেন চাইল না, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

তৃণমূল কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? শাসকদলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। দলীয় স্তরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durgapur tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE