হিরাপুরের এই কেন্দ্র রবিবার ছিল তালাবন্ধ।—নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনের অজান্তেই শহরে রমরমিয়ে চলছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নেশামুক্তি কেন্দ্র। কোনও অনুমতি ছাড়া কী ভাবে সেই কেন্দ্র চলে, কারা সেখানে চিকিত্সা করেনএ সব নিয়ে কোনও তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। শনিবার হিরাপুরের ইসমাইলের কাছে গুরুনানক পল্লি এলাকায় ওই কেন্দ্রে এক আবাসিকের মৃত্যুর পরে এই ধরনের বেনিয়ম নজরে এসেছে। গাফিলতির অভিযোগে ওই কেন্দ্রের এক কর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার কেন্দ্রটিতে তালা পড়ে গিয়েছে। অন্য কর্তাদের খুঁজছে পুলিশ।
আসানসোল রেলপাড় এলাকার বাসিন্দা রামাশঙ্কর যাদব পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাঁর বাবা মুনিলাল যাদবকে (৫৫) ওই কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন। মাসে তিন হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে কথা হয়েছিল। শনিবার ভোরে তাঁদের খবর দেওয়া হয়, মুনিলালবাবুর মৃত্যু হয়েছে। তার পরেই তাঁরা হিরাপুর থানায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতের ভিসেরা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।
তাঁদের অজ্ঞাতসারে শহরে কী ভাবে এই রকম একটি কেন্দ্র চলছিল, সে নিয়ে ধন্দে প্রশাসনের কর্তারাও। মহকুমাশাসক (আসানসোল) অমিতাভ দাস বলেন, “আমি বিষয়টি জেনেছি। কারা কী ভাবে এ সব চালাচ্ছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” আবাসিকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি পঙ্কজ দ্বিবেদী। তিনি বলেন, “তদন্ত শেষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মহকুমাশাসক জানান, আসানসোলে তিনটি অনাথ আশ্রম রয়েছে। সেগুলির ব্যাপারে তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে। আশ্রমগুলির আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসন নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। আসানসোলের গাড়ুই গ্রামে পুলিশের সহায়তায় একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র চলছে। সেটির খবরাখবরও তাঁরা রাখেন। কিন্তু এই কেন্দ্রটি কবে শুরু হল, কারা এটি চালাচ্ছেন, সে সব কিছুই প্রশাসন জানে না বলে মহকুমাশাসক জানান। এখানে কী পদ্ধতিতে নেশামুক্ত করানো হয়, তা-ও প্রশাসনের জানা নেই। মহকুমাশাসক বলেন, “সাধারণত এই সব কেন্দ্র চালাতে প্রশিক্ষিত লোক রাখতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক রাখতে হয়। আদৌ সেই সব ব্যবস্থা এখানে ছিল কি না, প্রশাসনের তা জানা নেই।” শনিবার ওই কেন্দ্রের অন্য আবাসিকেরা দাবি করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয় না। তাঁদের মারধর করা হয় বলেও অনেকে অভিযোগ জানান।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই এই কেন্দ্রটি চলছিল। রবিবার ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ আবাসিক নেই। মূল দরজায় তালা। অথচ, শনিবার বিকেল পর্যন্ত সেখানে জনা ১৬ আবাসিককে দেখা গিয়েছে। তাঁরা সব কোথায় গেলেন, পুলিশ বা স্থানীয় বাসিন্দাদের জানা নেই। ঘটনার পরে পুলিশ সেখানকার এক কর্তাকে আটক করেছে। আরও দুই কর্তা পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy